
২০২০ সালে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় ছাপা 'একজন রোবট এই রিপোর্ট লিখেছে, তুমি কি ভয় পাচ্ছ মানব?' শিরোনামের সংবাদ দিয়ে জিপিটি-থ্রি চ্যাটবট তার অসম্ভব ক্ষমতার কথা জানান দেয়। সেই সংবাদের বাইলাইনে কোনো সাংবাদিকের নাম ছিল না। ছিল শুধু জিপিটি-থ্রির নাম। আপনি যদি সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ দেখতে চান, তাহলে এখনই আপনার ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সেই নিউজ দেখে নিতে পারেন। হ্যাঁ, এটাই সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ। ব্যক্তি সাংবাদিকের বদলে বাইলাইনে থাকবে রোবট সাংবাদিক। আর এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মেশিন আপনার সব তথ্য সংগ্রহ করে পছন্দমতো সংবাদ আপনাকে সব সময় সরবরাহ করবে।
আপনি বাংলাদেশের নাম করা দৈনিকের সাংবাদিক। ভাবছেন, হায় হায়! আমার চাকরি তো গেল! না, আপনার চাকরি চ্যাটজিপিটি নিয়ে নেবে না। এর মূল কারণ, বাংলায় এর দক্ষতা অনেক কম। বিশ্বাস না হলে বাংলায় কিছু লেখার জন্য দিয়ে দেখুন। এই বটগুলো অনেকটা মানুষের মতো। এগুলোকে যেভাবে শেখানো হবে, তারা সেভাবেই শিখবে। তাদের ডাটা বেজে বাংলা ভাষার ভান্ডার কম। তাই তারা বাংলায় দুর্বল। কিন্তু বাংলা ভাষা শিখতে তার বেশি সময় লাগবে না। কারণ তার শেখার ক্ষমতা অনেক বেশি এবং দ্রুত। ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদের এলগরিদম একটু ভালো হলেই তার মগজে সব ঢুকে যাবে। হয়তো দেখা যাবে, আমার এই লেখা প্রকাশ হওয়ার আগেই চ্যাটজিপিটি ভালো বাংলা বলছে।
এই চ্যাটজিপিটি এবং অন্য বটরা সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ বদলে দেবে। এটা আমার কথা না; সাংবাদিকতা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিশ্বের যেসব পণ্ডিত কাজ করেন, তাঁদের কথা। বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমও পিছিয়ে নেই। 'রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি জার্নালিজম'-এর গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংবাদিকতার বর্তমান অবস্থাকে পরিবর্তন করবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে বড় বড় নিউজরুমের এক-তৃতীয়াংশ তাদের নিউজরুমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে। নিউজরুমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে কীভাবে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা যায়, এ নিয়ে চলছে গবেষণা। সংবাদ সংস্থাগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তি ইতোমধ্যে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশের জন্য ব্যবহূত হয়। ডিজিটাল মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাবের সঙ্গে এখন পুরো সংবাদপ্রবাহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও এলগরিদমের ওপর নির্ভরশীল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর কোনো সংবাদ সংস্থার জন্য বিলাসিতা নয়। এটি বিশ্বব্যাপী অনলাইনভিত্তিক নিউজ পোর্টালগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে ধারণা জানতে আমি এবং আমার সহকর্মীরা মিলে একটি গবেষণা করি। গবেষণার ফলাফল বলে, অধিকাংশ সাংবাদিকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে ধারণা নেই এবং এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কীভাবে নিউজরুমে কাজে লাগানো যায়. এ নিয়ে তেমন পরিকল্পনাও নেই। ২০২০ সালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে লিখেছিলাম, আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের সাংবাদিকতায় ব্যবহার শুরু হবে। চ্যাটজিপিটি নিয়ে আলোচনার তুমুল ঝড় সেই আশাকেই বাস্তবে রূপ দেবে।
সব শেষে বলব, চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শেখা। সঠিক গবেষণা আর দিকনির্দেশনা পেলে এ প্রযুক্তি আমাদের সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ বদলে দেবে এবং সবার সামনে অবারিত সুযোগ সেই বদলের অংশিদার হওয়ার।
মো. আশরাফুল গণি: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্
বিষয় : অন্যদৃষ্টি মো. আশরাফুল গণি
মন্তব্য করুন