- মতামত
- বন্যপ্রাণী পাচারে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্র
বন্যপ্রাণী পাচারে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্র
কোনোভাবেই থামছে না বন্যপ্রাণী পাচার। দেশি পাচারকারীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক চক্র। ফলে একের পর এক মামলা ও সাজা দিয়েও তা বন্ধ করা যায়নি। অর্থলোভী মানুষের লোভে বিপন্ন বিরল ও নানা প্রজাতির প্রাণী। মিয়ানমার থেকে বন্যপ্রাণী পাচার করে চট্টগ্রাম এনে তা ভারতে পৌঁছে দিচ্ছে চক্রটি। এ ছাড়া বন্যপ্রাণী পাচারে চট্টগ্রাম এখন আন্তর্জাতিক রুট হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে যশোরের একটি সিন্ডিকেট।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়ার দিগর পানখালীর সোনারাম দাসের ছেলে দীপক দাস বিপন্ন বন্যপ্রাণীর আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের অন্যতম সদস্য। যশোর সীমান্ত দিয়ে বিপন্ন প্রজাতির দুটি ভালুক শাবক ভারতে পাচারের আগেই ধরা পড়েন পুলিশের জালে। বন্যপ্রাণী আইনে মামলার আসামি হয়ে এখন কারাগারে বন্দি। এ চালানটির আগেও সম্প্রতি দুটি উল্লুক ও ছয়টি লজ্জাবতী বানর চোরাইপথে ভারতে পাচার করেন দীপক।
শুধু তিনি নন; তাঁর মতো বন্যপ্রাণী পাচারে জড়িত জুয়েল রহমান সোহেল। খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাফিজনগরের বাসিন্দা তিনি। ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বান্দরবান থেকে ১৬ হাজার টাকায় মহাবিপন্ন উল্লুক কেনেন সোহেল। বান্দরবান থেকে যশোরে পাচারের সময় চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজারে উলল্গুকসহ ধরা পড়েন। লাখ টাকায় ভারতীয় পাচারকারীদের হাতে উল্লুকটি পৌঁছে দেওয়াই ছিল তাঁর কাজ। তাঁদের মতো চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে বিরল ও বিপন্ন বন্যপ্রাণী পাচারে জড়িত কমপক্ষে ২৮ পাচারকারী। গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ভাদালিয়া এলাকা থেকে আইইউসিএনের তালিকায় থাকা বিপন্ন প্রাণী গন্ধগোকুল উদ্ধার করে প্রশাসন। পরে রাতেই বন বিভাগের কর্মকর্তারা এটিকে বাঁশখালী ইকোপার্কে অবমুক্ত করেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য দীপক দাস। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম অঞ্চল ও মিয়ানমার থেকে বন্যপ্রাণী পাচার করে আসছেন। অধিক মুনাফায় যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে বন্যপ্রাণী পাচারে জড়িত।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বন্যপ্রাণী পাচারে চট্টগ্রামকে এখন রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একের পর এক মামলা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা-জরিমানাও পাচারকারীদের পাচার থামানো যাচ্ছে না।
সাজা-মামলা দিয়েও কমানো যাচ্ছে না পাচার :বান্দরবানের আলীকদম থেকে একটি বিরল প্রজাতির তুষার পেঁচা ও দুটি লজ্জাবতী বানর পাচার করার সময় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ধরা পড়েন চার পাচারকারী। গত ২৭ জানুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দানু সদ্দার পাড়ার মোবার হোসেন, দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ার সাদ্দাম হোসেন, উত্তর পালং বাড়ির মহিউদ্দিন ও খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলা বইরা গ্রামের আজাহার সিকদারকে ৬ মাস করে কারাদ দেন। এমন আরও অনেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত থেকে সাজা এবং মামলার আসামি হয়েছেন।
দেড় বছরে চট্টগ্রামে উদ্ধার ৬২২ বন্যপ্রাণী :চট্টগ্রামে দেড় বছরে পাচার ও অবৈধভাবে বিক্রির সময় ৬২২ বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন, এই এক বছরে চট্টগ্রামে ৪২টি অভিযানে ৪২৫টি বন্যপ্রাণী ও পাখি উদ্ধার হয়। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৭টি অভিযানে ২০৯টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার হয়। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানায়, উদ্ধার হওয়া বন্যপ্রাণীদের মধ্যে তক্ষক, বনরুই, উলল্গুক, মায়া হরিণ, বানর, বন্য শুকর, বেজি, অজগর সাপ, গোখরা, গুইসাপ, দুধরাজ সাপ, পেঁচা, কালিম, মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, গন্ধগোকুল, ভালুক, লজ্জাবতী বানর, মুনিয়া, বুলবুলি, বানর, ঘুঘু, শালিক, টিয়া, কালিম, চিল, কাছিমসহ অন্যান্য প্রাণী রয়েছে।
চট্টগ্রাম দিয়ে সবচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে ৯টি বিপন্ন ও সংকটাপন্ন বন্যপ্রাণী। পাচারকারীদের টার্গেটে রয়েছে- উল্লুক, তক্ষক, শজারু, চিতা বিড়াল, মেছো বিড়াল, বনরুই, শুশুক, পেঁচা ও লজ্জাবতী বানর। এদের মধ্যে বনরুই বর্তমানে দেশ থেকে বিলুপ্ত হতে বসেছে।
চুনতি অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের তথ্য অনুসারে বর্তমানে শজারু, উল্লুক, বনরুই ও লজ্জাবতী বানর বিপন্ন বন্যপ্রাণী।
মন্তব্য করুন