ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে খাবার ও অন্য সবকিছুর দাম নাগালের বাইরে। গত এক বছরে খাদ্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি বেড়েছে। বিপরীতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের আয় বাড়েনি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সমকালে প্রকাশিত ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সবজিই যেখানে ভরসা’ শিরোনামে সাংবাদিক হাসান মামুনের নিবন্ধটি পড়েছি। নিবন্ধকার সবজির ওপর ভরসার কথা বলেছেন। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। ফলে সবজির বাজারেও উত্তাপ রয়েছে। ৬০-৭০ টাকা কেজিতে সবজি কিনে খাওয়া অনেক পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে পেতে টিসিবির ট্রাকের পেছনে নিয়মিত ছুটছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। পণ্যস্বল্পতার কারণে সেখান থেকেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। টিসিবির পণ্য তো মুদি পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। শাকসবজি ও আমিষের চাহিদা তো বাজারদরেই পূরণ করতে হচ্ছে। আমিষের মধ্যে মাছ-মাংসের দাম আকাশছোঁয়া। নাগালের মধ্যে ছিল ব্রয়লার মুরগি। তাও গত এক বছরে কেজিপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছে। ডিমের মূল্যও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

আমদানি পণ্যের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের দামও বেড়েছে। কৃষকরা তাদের চাষ করা সবজি কম দামে বিক্রি করলেও বাজার সিন্ডিকেটের ফলে তা দুই থেকে তিন গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না এবং ভোক্তাদের  চড়ামূল্যে পণ্য কিনতে হচ্ছে। বিপরীতে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য সেবার মূল্যও থেমে নেই। বাসা ভাড়া বেড়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য গত এক বছরে কয়েক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য, চিকিৎসা সেবা, যোগাযোগ, যাতায়াত খরচসহ কোনো কিছুই স্থির নেই। দাম বেড়েই চলেছে। বাড়তে বাড়তে মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

দুই-তিন বছর আগেও মধ্যবিত্ত পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় মাসিক খরচ ১৫ থেকে ২০ হাজার হলেও বর্তমান সময়ে তা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কিংবা তার বেশিতে গিয়ে ঠেকেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচের বাইরেও রয়েছে সন্তানদের পড়াশোনা ও টিউশনি খরচ, বৃদ্ধ পিতা-মাতার দেখাশোনা, আত্মীয়স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়া ইত্যাদি। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের যাদের আয় ৪০ হাজারের নিচে, তাদের পরিবার কীভাবে চলবে– এ প্রশ্নের উত্তর অনেকের কাছে জানা নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ফলে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না– এমনটাই দাবি করছে সরকার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির জন্য শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা দায়ী– এমনটা নয়। দেশে চলমান দুর্নীতি, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, অবৈধভাবে পণ্য মজুতদাররাও এর জন্য দায়ী।

সামনে আসছে পবিত্র রমজান। এ মাসকে কেন্দ্র করে কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠবে। তারা  অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে খাদ্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম হাঁকবে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।  

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়