সমাজে কোনো পেশাজীবী কিংবা গোষ্ঠীর ওপর অন্যায়-অবিচার হলে তারা প্রতিবাদ করে। কখনও তারা রাস্তায় নামে, কখনও কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। এ কর্মবিরতি বেশিরভাগ সময় আধবেলা কিংবা একবেলার জন্য হয়ে থাকে। এই কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়ার আগেই নির্দিষ্ট সময় হাতে নিয়ে সাধারণ মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি– কথাটা শুনলেই আঁতকে উঠতে হয়। মৃত্যুপথযাত্রী একজন রোগী হাসপাতাল গেটে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করবেন, আর চিকিৎসকরা তা দেখে মুখ ফিরিয়ে নেবেন– এটি ভাবতেই যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

গত ২ মার্চ সমকালে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম– ‘ডাক্তারকাণ্ডে আঙুল হারাল ছোট্ট শিশু’। এ খবরে দেখা যায়, চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনের মধ্যকার বিবাদ গড়িয়েছে মামলা-পাল্টা মামলায়। চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। যে কোনো সমস্যার সমাধান আলোচনা বা আইনিভাবে হতে পারে। মহান পেশার অধিকারী চিকিৎসকদের কর্মবিরতি কাম্য নয়। খুলনায় শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে খুলনার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে। আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এ কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণাও দিয়েছেন। এর ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা রোগী ও স্বজনদের।

তবে শুধু চিকিৎসকদের অমানবিকতার প্রতিচ্ছবি তুলে না ধরে দেশে এমন ঘটনা কেন বেড়ে চলেছে, সেদিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের সমাজে মহান পেশাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মানবসেবা অর্থাৎ চিকিৎসা পেশা। চিকিৎসকরা তাঁদের সবটুকু আন্তরিকতা এবং কর্তব্যের সঙ্গে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে তুলতে সহযোগিতা করেন। মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। কেন তাঁরা নিরাপত্তার জন্য বারবার পথে নামবেন আর কেনইবা মৃত্যুশয্যায় পড়ে থাকা রোগী থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবেন? রোগী কিংবা তাঁদের স্বজনদের হামলার শিকার হয়ে নিজেই হাসপাতালের কক্ষে চিকিৎসা নেবেন? এসব ঘটনার আড়ালে কী হচ্ছে, কর্তৃপক্ষকে সেদিকে নজর দিতে হবে। অপ্রীতিকর কিছু ঘটবে, কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী মারা যাবেন আর তার জন্য চিকিৎসকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে– এমনটা তো সমাধান হতে পারে না। একজন রোগীর অন্য কোনো কারণে মৃত্যু হলে ডাক্তারের কর্তব্যে অবহেলাকে দায়ী করে তাঁদের হেনস্তা করা হবে– এমন সমাজও তো আমাদের কাম্য নয়। এগুলোর পেছনে কিছু অসৎ মানুষ রয়েছে, যারা তাদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নিয়ে এসব কাজ করে থাকে। প্রশাসন কিংবা কর্তৃপক্ষকে তা নজরদারিতে আনতে হবে।

আবার সামান্য কিছু ঘটলেই চিকিৎসকরা কেন কর্মবিরতির ডাক দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন? প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনায় কেউ এককভাবে দায়ী নন। তবে আমাদের উগ্রপন্থি মনোভাব, বিচার-বিবেচনা না করে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর রীতি এর পেছনে দায়ী। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, কিছু চিকিৎসকের খামখেয়ালিপনা আর দালালের দৌরাত্ম্যও এসব ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা