খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী কর্মচারী, যিনি উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রারকে ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা নিয়ে আমরা শিক্ষক সমাজ ও জাতি খুবই বিব্রত।

উপাচার্য পদটি অনেক বেশি সম্মান ও মর্যাদার। কিন্তু দিন দিন আমরা উপাচার্য পদটিকে কলঙ্কিত করে যাচ্ছি। অতীতে দেখেছি, দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যকে জেলে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ভর্তি বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে একজন উপাচার্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর আগে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধেও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। পরে তিনি লিখিতভাবে ক্ষমা চান, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ রকম প্রতিটি ঘটনা খুবই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যেসব উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা কেউই পরিবার নিয়ে ওই ক্যাম্পাসে বসবাস করেননি। অভিযুক্ত উপাচার্যরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন। সে জন্য নিজস্ব শিক্ষক থেকে উপাচার্য নিয়োগে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিজস্ব কোনো অধ্যাপককে দায়িত্ব দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কল্যাণ বেশি অর্জিত হতে পারে।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে এত দিন পর ধর্ষণের অভিযোগ কেন এলো– সেটা একটা প্রশ্ন। ঘটনাটি ঘটে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ওই ঘটনা কাউকে জানালে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ চাকরি হারানোর ভয়ে অভিযোগ দিতে বিলম্ব করা হয়েছে। কিন্তু জানামতে, ওই উপাচার্য কয়েক মাস আগে তাঁর দায়িত্ব শেষ করেছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত হওয়া জরুরি। কারণ, উপাচার্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রও হতে পারে। কোনো সমীকরণে না মেলায় এখন উপাচার্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের দাবি। যদি উপাচার্য দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে ধর্ষণের যে শাস্তি আছে, তা কার্যকর করতে হবে। আর যদি মিথ্যা অভিযোগ হয়; ওই নারীকে উপযুক্ত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

তবে একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে কেন ধর্ষণের অভযোগ উঠবে? উপাচার্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকই নন শুধু; তাঁরা সমাজ এবং জাতির বিবেকও বটে। তাঁর এতটা নৈতিক অধঃপতন কীভাবে হতে পারে! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের অপকর্মের কারণে সমাজে সম্মান হারাচ্ছেন। উপাচার্য নিয়োগে সরকারকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। উপাচার্য নিয়োগপত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা থাকা উচিত। যেমন– কোনো ধরনের অপকর্ম উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হলে তাঁকে সেদিনই স্বেচ্ছায় উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। যদি না করেন তাঁকে বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানাসহ রাষ্ট্র উপাচার্য পদ থেকে অপসারণ করবে। তাহলে উপাচার্যরা অপকর্ম করতে সাহস পাবেন না। নিয়োগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকে তোয়াক্কা না করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছেন কোনো কোনো উপাচার্য। এমনটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। তাহলে তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? সমাজ শিক্ষিত মানুষ থেকে কী আশা করবে– এটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখন। যদিও বলার অপেক্ষা রাখে না, এখনও অনেক গুণী উপাচার্য রয়েছেন। শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রেখেই তাঁরা দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁদের কাছ থেকে শেখা উচিত।

দুঃখজনক হলেও সত্য, সামাজিক অবক্ষয়ের খবর সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশি দেখছি। এ থেকে পরিত্রাণ জরুরি। সে জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি, উপাচার্য পদটি আর যেন কলঙ্কিত না হয়, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সরকারের প্রতি অনুরোধ, এমন অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। মনে রাখতে হবে, দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।

ড. মো. শফিকুল ইসলাম : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ