- মতামত
- সম্ভাবনার সম্মেলন
সম্ভাবনার সম্মেলন
রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হইয়া গেল তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিট। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়া উহার সূচনা; সমাপ্তি সোমবার। আয়োজক সংস্থা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীগণের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মঙ্গলবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে দাবি করিয়াছেন, দেশি প্রতিনিধিগণ; তৎসহিত যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ভুটানসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, চীন, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বহু দেশের প্রায় তিন শত ব্যবসায়ী ও সরকারি প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। উপরন্তু সৌদি আরবের সহিত চারটি ব্যবসায়িক চুক্তি, চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ও এফবিসিসিআইর মধ্যে একটা সমঝোতা স্বাক্ষরিত হইয়াছে এবং জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করিয়াছেন। এফবিসিসিআই সভাপতি বলিয়াছেন, সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলিয়া ধরা তথা বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা। বিশেষ করিয়া অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ও বিশ্ব অর্থনীতিতে উহাদিগের অবস্থান বিবেচনায় লইলে বলা যায়, সম্মেলনের উক্ত উদ্দেশ্য প্রাথমিকভাবে সফল। সম্মেলন ঘিরিয়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হইয়াছে; প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে উহা ধরিয়া রাখিতে পারিলে এই দেশে অদূর ভবিষ্যতে বৃহৎ আকারের বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ দুরূহ হইবে না।
আমাদিগের এহেন ভবিষ্যদ্বাণী করিবার ভিত্তি হইল, বাংলাদেশের অর্থনীতি সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে একটা বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়া যাইতেছে। এখানে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য প্রায় সকল খাত উন্মুক্ত এবং উহার সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণে সরকার উদার হস্তে ব্যয় করিতেছে; বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ, দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ পরিষেবার আওতায় আনয়ন, ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ, কক্সবাজারের মাতারবাড়ী এনার্জি হাবের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ ইত্যাদি উহার প্রমাণ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং পৃথিবীর ৩৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হইয়াছে। ধারণা করা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হইবে। অর্থাৎ এখানকার স্থানীয় বাজার মোটেই উপেক্ষণীয় নহে। স্মর্তব্য, বিশ্বের সর্ববৃহৎ জনবহুল দুই দেশ– ভারত ও চীনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলস্বরূপ এই দেশে বিনিয়োগ করিবার অর্থ হইল বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাজারে প্রবেশের নিশ্চয়তা। সর্বোপরি এখানকার বিশেষত শ্রম ও বিভিন্ন পরিষেবার জন্য তুলনামূলক স্বল্প ব্যয়ের বিষয়েও সকলে জ্ঞাত।
ইহা অনস্বীকার্য, এই সকল সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বিগত বৎসরগুলিতে বাংলাদেশ প্রত্যাশিত বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করিতে পারে নাই। এ ক্ষেত্রে আমাদিগের বক্তব্য, যে কোনো পণ্যের শুধু গুণ থাকিলেই হয় না; তজ্জন্য ক্রেতা পাইতে কার্যকর বিপণন কৌশল প্রয়োগও জরুরি। আমাদিগের মতে, আলোচ্য সম্মেলনকে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সেই খামতি দূর করিবার একটা সফল প্রয়াস এবং এই ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনকারী হিসাবে বিবেচনা করা যায়। তবে ইহাও স্বীকার করি, শুধু একটা সফল সম্মেলন দেখিয়াই বিদেশিরা এই দেশে বিনিয়োগ করিতে ছুটিয়া আসিবে না। ইহার জন্য বিশেষত সরকারকে আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলিতে হয় বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকের কথা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত উক্ত সূচকে বাংলাদেশের স্থান ছিল ১৯০ দেশের মধ্যে ১৬৮তম; যাহা মোটেও আশাব্যঞ্জক নহে। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ তখন উক্ত সূচকে দেশের অবস্থান অচিরেই দুই অঙ্কের ঘরে নামাইয়া আনিবার ঘোষণা দিয়াছিল। বিশ্বব্যাংক বিশেষ কারণে উক্ত সূচকের প্রকাশ আপাতত বন্ধ রাখায় বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে জ্ঞাত না হইলেও পরিবেশ-পরিস্থিতি খুব একটা উন্নতির স্বাক্ষর বহন করে না। আমাদিগের প্রত্যাশা, রাষ্ট্রের পরিচালকগণ ইহাতে মনোনিবেশ করিবেন; ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হইবার জন্য যাহা অপরিহার্য।
মন্তব্য করুন