আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশের খবর মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ জয়ের মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়েছে টাইগাররা। ওয়ানডে ম্যাচে ৩-১ ব্যবধানে ইংরেজদের কাছে হেরে যাওয়ার পর মন ভেঙেছিল দর্শকের। সেই মরা মনে চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে বেশি সময় নেয়নি সোনার ছেলেরা। টি২০-তে শুধু সিরিজ জয় নয়; বাংলাওয়াশ করেই উচিত জবাব দিয়েছে আমাদের খেলোয়াড়রা। এ জয় আমাদের। ১৭ কোটি বাংলাদেশির।
লাল-সবুজের জার্সিধারীরা হারলে যেমন বেদনার আগুন জ্বলে আমাদের বুকে, একইভাবে তাদের জয় আমাদের আনন্দিত করে। সেই জয় যদি হয় ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে হোয়াইটওয়াশ করার মধ্য দিয়ে, তাহলে সেই আনন্দ প্রকাশের জন্য বিশেষণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অনেক দিন ধরে টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ আশানুরূপ ভালো করতে পারছিল না। ফলে দর্শকের প্রত্যাশায় কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। কিন্তু এবার ইংরেজদের উড়িয়ে দেওয়ার পর দর্শকরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার প্রত্যাশায় বুক বাঁধছেন। বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এই বিজয় নিঃসন্দেহে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

ফুটবলে সুনিপুণ খেলার জন্য আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থক রয়েছে বিশ্বব্যাপী। ফুটবলে বাংলাদেশের তেমন কোনো গৌরব না থাকলেও ক্রিকেটে উল্লেখ করার মতো অনেক অর্জন রয়েছে। মঙ্গলবার ইংলিশদের বিরুদ্ধে শেষ টি-টোয়েন্টিতে জয়ের মাধ্যমে তাদের হোয়াইটওয়াশ হলো সর্বশেষ উদাহরণ। পৃথিবীর যে প্রান্তের বাসিন্দাই হোন না কেন; যাঁরা খেলা দেখেন কিংবা খেলাধুলার খোঁজ রাখেন, তাঁদের বাংলাদেশকে চেনারই কথা। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা– কেউই এখন আর বাংলাদেশকে দুর্বল প্রতিপক্ষ মনে করে না। কারণ ক্রিকেটের শক্তিশালী এসব দেশ মাশরাফিদের কাছে হেরেছে। মঙ্গলবারের জয় ইংরেজদের সেই অভিজ্ঞতাই দিয়েছে।

এ দেশের যুবসমাজ অনুকূল পরিবেশ আর সুযোগ পেলে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে পারে– এটি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। এ উপলব্ধি থেকেই বহু বছর আগে কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখে গেছেন– ‘সাবাস, বাংলা দেশ, এ পৃথিবী/ অবাক তাকিয়ে রয়ঃ/ জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আম্পায়ারের কোনো কোনো সিদ্ধান্ত কখনও কখনও আমাদের কাছে বিব্রতকর মনে হয়েছে। ম্যাচ হারায় তাদের ভূমিকাও কম-বেশি ছিল বটে। তাই বলে ভেঙে পড়েনি এ দেশের খেলোয়াড়রা। তারা বারবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হতে হবে বিশ্বকাপ জয়। ক্রিকেট বিশ্বকাপে আমাদের পদচারণা অনেক দিনের না হলেও এখন আর নিজেদের নবীন ভাবার সুযোগ নেই। বহু আগেই মধুচন্দ্রিমাকাল পার হয়ে গেছে। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত আসরে সুযোগ পেলেই খুশি হওয়ার দিন শেষ। এবার ফাইনাল খেলার প্রস্তুতি নিতে হবে এবং শিরোপা জয়ই চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত।

পুরোনোদের পাশাপাশি নতুনরাও যে ভালো খেলে– তার প্রমাণ এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া গেছে। এর আগেও আমরা তা দেখেছি। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম দেখিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানের অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। আমাদের ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি শক্তিশালী; আছেন সুদক্ষ কোচ ও নির্বাচক। তারপরও আমাদের খেলোয়াড় ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গ্রুপিংয়ের অভিযোগ ওঠে, যা হতাশাজনক। বিসিবি সভাপতি সম্প্রতি সাকিব ও তামিমের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা সংবাদমাধ্যমের সামনে খোলাসা করেছেন। বিষয়টির ব্যাখ্যা সাকিব-তামিম দিয়েছেন।

অন্তর্কোন্দল থাকলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা কঠিন। কারণ একটি ম্যাচ উঠিয়ে আনা পুরোটাই টিমওয়ার্ক। টি২০-তে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের সম্মানিত করায় টাইগারদের অভিনন্দন। এ জয়ের ধারাবাহিকতায় আগামী বিশ্বকাপে ভালো কিছু দেখার অপেক্ষায় থাকব আমরা। এ জন্য প্রত্যাশা করছি, বিসিবি যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মনে রাখতে হবে, এসব খেলা নিছক ক্রীড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনেরও উপলক্ষ। মঙ্গলবারের জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের যে সামর্থ্য আমরা দেখেছি তা বিশ্বমঞ্চে দেখার প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।

মিজান শাজাহান: সহ-সম্পাদক, সমকাল
mizanshajahan@gmail.com