- মতামত
- 'অভিনয়ের জন্যই এই শহরে একা পড়ে আছি, বিষয়টি ঠিক তা নয়'
'অভিনয়ের জন্যই এই শহরে একা পড়ে আছি, বিষয়টি ঠিক তা নয়'

অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননা হিসেবে ২০২১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ডলি জহুর। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন তিনি। এই প্রাপ্তি এবং শিল্পীজীবনের দীর্ঘ পথপরিক্রমা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে–
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেলেন। এমন স্বীকৃতি পাওয়ায় অনুভূতি কেমন ছিল
অনুভূতির কথা আর কী বলব, এটা বলে বোঝানো কঠিন। আগেও দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। এবার সম্মাননা পেলাম সারাজীবনের অভিনয়ের জন্য। এটা বাড়তি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার মতো বিষয় কিনা– তা ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে প্রথম যে বছর ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই তখন উনি [স্বামী জহুরুল ইসলাম] খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁর সেই আনন্দ আমার মনেও উচ্ছ্বাস এনে দিয়েছিল।
এই সম্মাননা পাওয়ায় পর যাপিত জীবন কোনো পরিবর্তন আসছে বা দায়িত্ব বেড়েছে বলে মনে করছেন?
স্বীকৃতি বা সম্মাননা পেলেই কাজের দায়িত্ব বেড়ে যায়– এটা কখনও মনে করি না। ভালো কাজে শিল্পীর দায়বদ্ধতা থাকে। কাজ খারাপ হলে নিজেকেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। কাজের মধ্য দিয়েই তো যার যার পরিচিতি। তাই কে কোন পথে পা বাড়াবে, কীভাবে নিজের কাজ উপস্থাপন করবে– সেটা তার সিদ্ধান্ত। অভিনয় আমার নেশা ও পেশা; ভালো লাগা, ভালোবাসা সব অভিনয়কে ঘিরে। তাই অভিনয়শিল্পী হিসেবে যখন যে কাজই করি, নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা থাকে।
জীবনের বেশিরভাগ সময় অভিনয়ের মধ্য দিয়েই কাটিয়ে দিলেন। অভিনয়শিল্পী হওয়ার বাসনা কি ছোটবেলা থেকেই ছিল?
কৈশোরে মঞ্চ নাটক দিয়ে অভিনয় শুরু। শখ আর কৌতূহল থেকেই অভিনয় করেছি। শুধু অভিনয় নয়; নাচ, গানও করেছি। কিন্তু শিল্পী বা অভিনেত্রী হবো– এই ভাবনা আদৌ ছিল না। ওই যে কথায় বলে না, কালের স্রোতে ভেসে যাওয়া। আমার বেলায়ও সেটিই হয়েছে। কালের প্রবাহে অভিনেত্রী হয়ে গেছি। আর অভিনয় করতে গিয়ে এটা কখন যে নেশায় পরিণত হয়েছে, বুঝতেই পারিনি।
নাটক, সিনেমায় একনাগাড়ে অভিনয় করে যাচ্ছেন। মঞ্চের প্রতি কোনো দুর্বলতা নেই?
ভীষণ আকর্ষণ মঞ্চের প্রতি। স্বাধীনতার আগে ও পরে নাওয়া-খাওয়া ভুলে মঞ্চে কাজ করেছি। এখনও চাই। কিন্তু নাটক, সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আগের সব রুটিন এলোমেলো হয়ে গেছে।
কাছের অনেক মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আপনার ছেলে, তাঁর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশের বাইরে থাকেন। এর পরও রাজধানী শহরে একাকী জীবনযাপন করছেন, শুধু কি অভিনয়ের নেশায়?
অভিনয়ের নেশা কাটিয়ে ওঠা কঠিন। অন্যদের কথা জানি না, আমার পক্ষে অভিনয় ছেড়ে থাকা প্রায় অসম্ভব। তবে অভিনয়ের জন্যই যে এই শহরে একা পড়ে আছি, ঠিক তা নয়। আসলে দেশ ছেড়ে থাকার ইচ্ছা কখনও হয়নি। যেভাবেই থাকি, যেমন থাকি, নিজের দেশেই থাকতে চাই। ছেলে তার পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে ভালোই আছে। প্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিদিনই যোগাযোগ করতে পারছি– আর কী চাই। আর যাঁরা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁদের কথাও প্রায়ই মনে পড়ে। পুরোনো দিনের স্মৃতি বারবার মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। কিন্তু এটাই সত্যি, একে একে সবাই চলে যাবে এবং সেটা মেনে নিতেই হবে।
মন্তব্য করুন