ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

ভালো খাবার জুটবে কি হাবিব, শেফালিদের

রোজায় সেহরি ও ইফতার

ভালো খাবার জুটবে কি হাবিব, শেফালিদের

প্রতীকী ছবি

মামুন রেজা, খুলনা

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৩ | ০৮:০৩

‘বাজারে গিয়ে ২ কেজি চাল কিনলে মাছ কেনা যায় না। আর মাছ কিনলে তরি-তরকারি কিনতে পারি না। আগে মাঝেমধ্যে ব্রয়লার মুরগি কিনে খেতাম; এখন তাও জোটে না। সামনে রমজান। রোজা রেখে তেমন কাজও করতে পারব না। কিন্তু খরচ বাড়বে। ছোলা, মুড়ি, চিড়া, খেজুর– সবকিছুর দাম রমজানে বাড়িয়ে দেয়। দাম বাড়লে গরিবের মরণ ছাড়া আর কী আছে?’

 এভাবেই কষ্টের কথা বলছিলেন খুলনা নগরীর গল্লামারী কৃষ্ণনগর এলাকার বাসিন্দা মো. হাবিব শেখ। খুলনার ৪ নম্বর ঘাটে দিনমজুরি করেন তিনি। শুধু হাবিবই নন; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ। তাঁরা কি ইফতার-সেহরিতে ভালো খাবার খেতে পারবেন– এ প্রশ্নই আসছে ঘুরেফিরে।

দিনমজুর হাবিব গম, সার, চাল, সিমেন্ট, বালুসহ বিভিন্ন পণ্যের বস্তা টানেন। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পান তিনি। ৬২ বছর বয়সী হাবিব আগের মতো কাজ করতে পারেন না। সকাল ৭টায় কাজে আসেন, রাতে বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে, দুই মেয়ে। ঘরে ছয় জন। বড় ছেলেও দিনমজুর। তার স্ত্রী ও এক ছেলে আছে। ছোট ছেলে কিছু করে না। খুব কষ্টে সংসার চালাতে হয়। মাস শেষে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, জ্বালানি কাঠ কিনতেই টাকা ফুরিয়ে যায়। রোজার সময় বাড়ির সবাই ইফতার-সেহরিতে একটু ভালো খাবার খেতে চায়। পণ্যের যে দাম, তাতে কি ভালো কিছু কিনতে পারব?’

খুলনা রেলস্টেশন চত্বরে ফেরি করে চা-সিগারেট, বিস্কুট বিক্রি করেন শেফালি বেগম। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে খুলনা রেলওয়ে বস্তিতে ভাড়া থাকেন। তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা গেছেন। এর পর অভাব দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে কাজের জন্য রাস্তায় নামি। ১০ বছর ধরে চা-সিগারেট, বিস্কুট বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফেরি করি। এতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। শাক-সবজি, ভর্তা, ডাল খেয়ে দিন কাটাতে হয়। দুই মাস আগে মেয়ে বলেছিল, মাংস খাবে। তার কথায় ১৮০ টাকায় ছোট একটি ব্রয়লার মুরগি কিনেছিলাম। এর পর আর কিনতে পারিনি। রোজায় কী করব, বুঝতে পারছি না!’

নগরীর বাগমারা এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক ইসমাইল হাওলাদার বলেন, গত বছর রোজার সময় যে কলার দাম ছিল ৩-৪ টাকা, এখন তা ৭-৮ টাকা। চিড়া, মুড়ি, চিনি, ছোলা, চাল, তেলসহ সব জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে, আমাদের আয় তো সেভাবে বাড়েনি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর-খুলনার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় এ বছর মার্চে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। গত বছর যে আটার দাম ছিল ৪২ টাকা, এখন তা ৭২ টাকা। চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। ৭০ টাকার ছোলা এখন ৮৮ টাকা। ৮০ টাকার চিনি বেড়ে হয়েছে ১১৬ টাকা। ১৮ টাকার আলু এখন ২২ টাকা। সয়াবিন তেলের মূল্য বেড়েছে লিটারে ১১০ টাকা। যে রুই মাছের দাম ছিল ৩০০ টাকা, তা এখন ৩৫০ টাকা। ৪৪০ টাকার দেশি মুরগি ৪৮০ টাকা, ১৫০ টাকার ব্রয়লার মুরগি এখন ২৪০ টাকা। খাসির মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। ৬০০ টাকার গরুর মাংস এখন কিনতে হচ্ছে ৭০০ টাকায়। ডিমের হালি ৩৮ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, সরকারি দপ্তরের হিসাবের চেয়ে বাস্তবে দাম বেড়েছে অনেক বেশি। অনেক খাদ্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গত এক বছরে সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী ছাড়া অন্যদের আয় তেমন বাড়েনি। কিন্তু প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সাধ থাকলেও এবার নিম্ন আয়ের মানুষ ইফতার-সেহরিতে ভালো খাবার কিনে খেতে পারবে না।

নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঙাশ, তেলাপিয়া মাছের দামও খেটে খাওয়া মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আগে তেলাপিয়া কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে; এখন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেজুরের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। ৪৫ টাকার চিড়ার কেজি এখন ৬০ টাকা। ৬০ টাকা কেজি মুড়ি এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। ১৬০ টাকা কেজির আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়।

আরও পড়ুন

×