ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

অ-পেশাদারিত্ব

অ-পেশাদারিত্ব

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর বরগাঁও গ্রামে ১৭ মার্চ রাত্রিতে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাব সাদা পোশাকে সন্দেহভাজন এক আসামিকে গ্রেপ্তার করিতে গিয়া যে পরিস্থিতির জন্ম দিয়াছে, উহা যে কোনো বিবেচনাতেই অনাকাঙ্ক্ষিত। সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, উক্ত অভিযানকালে পরিচয় সম্পর্কিত গ্রামবাসীর অব্যাহত প্রশ্নের মুখে র‍্যাব নিরুত্তর থাকিলে গ্রামবাসী তাহাদিগের ডাকাত বা সন্ত্রাসী মনে করিয়া অভিযানে বাধা দেয়। ইহাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তথায় র‍্যাব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। যাহার ফলস্বরূপ একজন বৃদ্ধের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়। একটা এলিট বাহিনী, যাহাদিগের দায়িত্ব জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা; এহেন আচরণ অবশ্যই উদ্বেগজনক। আরও উদ্বেগজনক, মঙ্গলবার সমকালের এক প্রতিবেদনে যেমনটা বলা হইয়াছে, বিষয়টার শান্তিপূর্ণ সুরাহা না করিয়া র‍্যাব ২১ জনের নামোল্লেখ এবং ৭০ হইতে ৮০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় দেখাইয়া সংশ্লিষ্ট থানায় একটা মামলা করিয়াছে। যাহার ফলে সম্পূর্ণ গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য হইয়া পড়িয়াছে।
র‍্যাবের দাবি, গ্রামবাসী আসামি ছিনাইয়া লইতে দেশি অস্ত্র সহকারে তাহাদিগের উপর হামলা চালাইয়াছে। কিন্তু প্রতিবেদনে ইহা স্পষ্ট– গ্রামবাসী ভীত হইয়াই তাহা করিয়াছে। আর গ্রামবাসীর ভীত হইবারও যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান। অদ্যাবধি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বহু ঘটনা ঘটিয়াছে, যথায় র‍্যাব বা অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গুম, অপহরণ, অর্থ ছিনতাই– এই রূপ অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে। আমাদিগের স্মরণে আছে, এই রূপ অপরাধের বাড়বাড়ন্ত দেখিয়াই ২০১৪ সালে পুলিশ সদরদপ্তর হইতে বাহিনীর সকল ইউনিটের উদ্দেশে সাদা পোশাকে যে কোনো অভিযান বন্ধে লিখিত নির্দেশনা জারি হইয়াছিল। র‍্যাব একটা বিশেষ বাহিনী হইলেও পুলিশেরই অংশ। অতএব উক্ত নির্দেশনা নিশ্চয় র‍্যাবের জন্যও প্রযোজ্য। হলফ করিয়া বলা যায়– র‍্যাব নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিধান করিয়া অভিযানে অংশ লইলে গ্রামবাসী কস্মিনকালেও উক্ত অভিযানে বাধা প্রদান করিত না। কারণ তখন উহা যে বেআইনি কর্ম হইত– সেই প্রতীতি নিশ্চয় গ্রামবাসীর মস্তিষ্কে থাকিত। মনে রাখিতে হইবে, গ্রামবাসী কিন্তু মধ্যরাত্রে অভিযানকারীগণের পরিচয় নিশ্চিত হইতে ৯৯৯ তথা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরেও ফোন করিয়াছিল। উপরন্তু গ্রামবাসীর অধিকাংশই যে নিরীহ প্রকৃতির– উহা বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়া অনাবশ্যক।

স্বীকার করিতে দ্বিধা নাই, র‍্যাব গঠিত হইয়াছিল এক বিশেষ পরিস্থিতিতে, যখন দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদে দীক্ষিত দুর্ধর্ষ অপরাধীদিগের তৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাইয়াছিল। উক্ত পরিস্থিতি সামলাইবার ক্ষেত্রে র‍্যাব যে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করিয়াছে– উহাও অস্বীকারের অবকাশ নাই। বলা বাহুল্য, এই কারণেই কিন্তু জননিরাপত্তা লইয়া শঙ্কিত জনগণের মধ্যে এক সময় র‍্যাবের গ্রহণযোগ্যতা দারুণভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছিল। কিন্তু দুঃখজনক, বিশেষত অপরাধ দমনে বাহিনীটির কতিপয় ভ্রান্ত প্রক্রিয়া অনুসরণের কারণে র‍্যাবের বিরুদ্ধে এক পর্যায়ে বিচাবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠিতে থাকে। যাহা জাতীয় পর্যায়ে তো বটেই, আন্তর্জাতিক পরিসরেও নেতিবাচক চর্চার বিষয়ে পরিগণিত। তবে লক্ষণীয়, বিশেষত সরকারের সতর্কতার কারণে র‍্যাবের বিরুদ্ধে ইদানীং ঐ ধরনের অভিযোগ বহুলাংশে হ্রাস পাইয়াছে। কিন্তু ইহাও স্বীকার করিতে হইবে, সেনারগাঁয়ে র‍্যাব যে ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনার জন্ম দিয়াছে, উহা সাম্প্রতিক প্রবণতার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ নহে।

আলোচ্য ঘটনায় যে র‍্যাবের ঐ দলটির পেশাদারিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলিয়াছে, উহাতে কোনো সন্দেহ নাই। অবশ্য মনে রাখিতে হইবে, কতিপয় সদস্যের অপেশাদার কর্মকাণ্ডের দায় সম্পূর্ণ বাহিনীর উপর চাপানো যায় না। তাই অবিলম্বে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে ঘটনাটির স্বরূপ উদ্ঘাটন জরুরি। একই সঙ্গে উক্ত পাইকারি হারে রুজু করা মামলা প্রত্যাহার করিয়া তদন্তে উভয় পক্ষের যাহাদিগের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ মিলিবে, তাহাদিগের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। স্মর্তব্য, এই নারায়ণগঞ্জেই বাহিনীটির কতিপয় সদস্যের ‘সাত খুন’ কীভাবে সমস্ত বাহিনীর ভাবমূর্তিতে কালিমালিপ্ত করিয়াছিল। এই রূপ অঘটনের পুনরাবৃত্তি কাম্য হইতে পারে না।

আরও পড়ুন

×