- মতামত
- ইতিহাসে রোজার বিধান
ইতিহাসে রোজার বিধান

রমজানের রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে। এর আগেও রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম আশুরা ও আইয়ামে বিজের রোজা রাখতেন। পরে সেগুলো নফল হিসেবে পরিগণিত হয়।
পৃথিবীর শুরুর যুগ থেকেই রোজার বিধান ছিল। প্রত্যেক যুগে ছিল আলাদা নিয়মের আলাদা ধরনের রোজা। তবে সকল যুগে রোজার উদ্দ্যেশ্য ছিল একটাই। বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করা।
ইরশাদ হয়েছে, 'হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বের লোকদের ওপর। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।' সুরা বাকারা ১৮৩
এই আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, পূর্ববর্তী উম্মতগণের ওপরও রোজা ফরজ ছিল। তবে রোজার ধরন, শর্ত ও নিয়মে ছিল ভিন্নতা। যা পবিত্র কোরআনের অন্যান্য আয়াত, হাদিস ও এতদসংশ্লিষ্ট আলোচনা থেকে জানা যায়।
হজরত ঈসা (আ.) এর যুগের রোজা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা হজরত মারইয়াম (আ.) কে বলেন, 'যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখো তাহলে বলো, আমি দয়াময় আল্লাহর উদ্দেশ্যে মৌনতা অবলম্বনের মান্নত করেছি। কাজেই আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সাথে কথা বলব না।' সুরা মারইয়াম ২৬
এখানে বলার অর্থ হলো ইশারা ইঙ্গিতে বলা। মুখের দ্বারা বলা নয়। কেননা তাদের শরিয়তে রোজার অর্থই ছিল খাওয়া ও কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
হজরত কাতাদা (রহ.) বলেন, হজরত মারইয়াম (আ.) খাবার, পানীয় ও কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজা পালন করেছিলেন।
কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, ইসলাম পূর্বকালে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত মৌনতা অবলম্বন করা এবং কারও সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকা রোজা ও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। (ইবনে কাসির)
হজরত মুসা (আ.) এর যুগে রোজা ছিল। তাওরাত নাজিলের আগে হজরত মুসা (আ.) কে চল্লিশ দিন রোজা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন, ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এ দিনে রোজা রাখো কেন? তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এই দিনে আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাইলকে শত্রুর কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। ফলে এই দিনে মুসা (আ.) রোজা রাখতেন। রাসুল (সা.) বলেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসা (আ.) এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এই দিনে রোজা রাখেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে রোজা রাখার নির্দেশ দেন। সহিহ বুখারি ২০০৪
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে ইসলামের শুরুর যুগে আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল। অতঃপর রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজার ওয়াজিব বাতিল হয়ে তা মুস্তাহাব হয়ে যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রমজানের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা ছেড়ে দেয়া হয়। যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না। সহিহ বুখারি ২০০২
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ছিল হজরত দাউদ (আ.) এর রোজা। রাসুল (সা.) বলেন, রোজাসমূহের মধ্যে দাউদ (আ.) এর রোজা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তিনি একদিন রোজা রাখতেন এবং পরবর্তী দিন রোজা রাখতেন না। ইবনে মাজাহ ১৭১২
হজরত নুহ (আ.) বছরে দুদিন ব্যতিত সারা বছর রোজা রাখতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত নুহ (আ.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ব্যতীত সারা বছর রোজা রাখতেন। ইবনে মাজাহ ১৭১৪
প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) এর যুগেও রোজা ছিল। আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আ.) কে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। সেই বৃক্ষের ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকাও ছিল এক ধরনের রোজা। তিনি তা থেকে বিরত থাকতে পারেননি। এই জন্য হজরত আদম ও হাওয়া (আ.) এর শরীর থেকে জান্নাতের পোশাক খুলে যায়। শরীরের রং হয়ে যায় কুৎসিত। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আইয়ামে বিজের রোজা অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতে নির্দেশ দেন।
লেখক: ধর্মীয় নিবন্ধকার
মন্তব্য করুন