আর্থিক সংকটের কথা বলে মেয়েদের মিয়ানমার না পাঠানোয় এই মুহূর্তে সমালোচিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। বুধবার এই বিষয় নিয়েই জরুরি সভা করে বাফুফে কার্যনির্বাহী কমিটি। বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত আসবে বলে বাফুফে ভবনে মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। 

কিন্তু সভা শেষে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কোনো কথাই বলতে রাজি হচ্ছিলেন না বাফুফে সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক এবং সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগও। তার পরও বলতে হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যা ঘটেছে সেটাকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হিসেবে দেখছেন মানিক। জানিয়েছেন, সারা বছর মেয়েদের সব খেলা চালাতে গেলে এখনও আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকা ঘাটতি আছে, যা চেয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে বাফুফে।

গত কয়েক দিন ধরে চলা বিতর্কগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো বিভাজন নেই। ভুল বোঝাবুঝিগুলো আসলে দূরত্বের কিছু না। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আর যুব মন্ত্রণালয় তো ক্রীড়াঙ্গনে সবার ওপরে আছে। তো একটা ভুল করলে ভুলটা সংশোধন করবে, এটাই তাদের কাজ। তাই বলে তারা তো দূরে সরিয়ে দেবে না। বাবা-ছেলের মধ্যেও তো দূরত্ব হয়, তার পরে ছেলে আবার বাবার কাছে চলে আসে।’ 

মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে ৯২ লাখ টাকার বাজেট দেয় বাফুফে। সেই বাজেটের বেশ কয়েকটি দিক নিয়ে আপত্তি তুলেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে যে বাজেট দিয়েছে তা সঠিক ছিল বলেই দাবি করেন সাধারণ সম্পাদক সোহাগ, ‘আমি মনে করি, যেই বাজেট দেওয়া হয়েছে, সেটা যৌক্তিক ছিল। যদি সেটা নিয়ে বসতে পারতাম তাহলে আরও ভালো হতো। তখন হয়তো বলতাম, ৫০টা নয়, ২০টা বল দরকার।’ 

এ বছরই মেয়েদের আরও পাঁচটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট রয়েছে। এরই মধ্যে চলতি মাসে সিঙ্গাপুরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের রাউন্ড ওয়ানে খেলতে যাবেন মেয়েরা। তার পর জুলাই, অক্টোবর এবং নভেম্বরে ফিফা উইন্ডোতে জাতীয় নারী দল হোম এবং অ্যাওয়ে মিলিয়ে ছয়টি ম্যাচ খেলবে। এই আসরগুলো খেলতে ৮ কোটি টাকার মতো প্রয়োজন। বর্তমান বাফুফের কোষাগারে আছে আনুমানিক ৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এসব অর্থ ফিফা, এএফসি এবং স্পন্সরদের কাছে থেকে আসে বলে জানান সোহাগ। কিন্তু পুরো বছরে মেয়েদের যত প্রতিযোগিতা আছে, তাতে খরচ হবে ৮ কোটি টাকার ওপরে। 

তাই বাফুফের দাবি অনুযায়ী এখনও আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকার ঘাটতি আছে তাদের। সেই ঘাটতি পোষাতে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে আড়াই কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দেবেন বলে জানান মানিক, ‘এ বছর মেয়েদের যে টুর্নামেন্টগুলো আছে, সব করতে গেলে যে আর্থিক বিষয় আছে, এগুলো নিয়ে আজকে (বুধবার) আলোচনা করেছি।। এর পর একটা বাজেট তৈরি করে বোর্ডে আলোচনা করব। প্রয়োজনে আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অর্থ সহযোগিতা চাইব, যাতে করে মেয়েদের দল আগামীতে বিদেশে খেলতে যেন এ রকম কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়।’ 

মিয়ানমারে দল না যাওয়ার বিষয়টি কার্যনির্বাহী কমিটির অনেকেই নাকি জানেন না। সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরন এবং সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের সিদ্ধান্তেই নাকি মেয়েদের সফর বাতিল হয়। কার্যনির্বাহী কমিটির অনেকেই এটা নিয়ে মিডিয়ায় কথা বলেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ মানিক, ‘নির্বাহী কমিটির কারা বলেছেন, সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু আজকে যে আমাদের মিটিং হলো, সেখানে কোনো সদস্য এই কথাটা উত্থাপন করেননি। এই কারণেই আমি মনে করি, সদস্যদের কথাগুলো মিটিংয়ে না বলে বাইরে বলা উচিত না।’