প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ২০১৩ সাল থেকে পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বহু দেশের উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। এমনকি বাংলাদেশেও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শ্লথ হয়ে গেছে। তবে বেজা তার উন্নয়ন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তৈরি হচ্ছে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল।

এর নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার ও জার্মানির কোম্পানি রুডলফ। ইতোমধ্যে দুটি জাপানি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয় গত ডিসেম্বরে। এগুলো হলো, ওনদা করপোরেশন (গ্যাস মিটার প্রস্তুতকারী) এবং নিক্কা কেমিক্যালস। আরও প্রায় ৩০টি জাপানি এবং অন্যান্য দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে এখানে আনুমানিক ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হওয়ার পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পথচলা শুরু হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালে জাপান সফরের মাধ্যমে। ২০১৫ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরের সময় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। ২০১৬ সালে জাইকা বাংলাদেশে একটি জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ হাতে নেয় এবং একই বছর জাপান সরকার বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সুমিতোমো করপোরেশনকে ডেভেলপার হিসেবে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করে। ২০১৭ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে জাইকা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পক্ষে মত দেয়। পরবর্তী সময়ে যৌথ উদ্যোগে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ২০১৯ সালে বেজা ও সুমিতোমো করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বেজা ২০১৯ সালে প্রস্তাবিত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন কাজ শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে ৫০০ একর ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক, রিটেনশন পন্ড বা জলাধার, নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। অভ্যন্তরীণ সড়ক, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নির্মাণেও কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত কোম্পানির অনুকূলে ১৮০ একর উন্নত জমি বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনকে হস্তান্তর করা হয়েছে, যা শিল্পকারখানা তৈরির জন্য প্রস্তুত। অবশিষ্ট জমি শিগগিরই হস্তান্তর করা হবে।

বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড থেকে জানা যায়, জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা জোনটি পরিদর্শন করছে। আমি মনে করি, আগামীতে হাজার হাজার তরুণের ‘স্বপ্নের গন্তব্য’ হবে জাপানি জোন এবং এ জোনের মাধ্যমে জাপান-বাংলাদেশের মধ্যে প্রযুক্তি স্থানান্তরের পথ সহজ হবে। উল্লেখ্য, জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পৃথক একটি ওএসএস সেন্টার এবং স্কিলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন করা হবে।
জাপান বাংলাদেশের সপ্তম বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ (২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। বাংলাদেশে জাপানের এফডিআই স্টক প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বাংলাদেশে জাপানি ব্যবসার অনেক সুযোগ রয়েছে। জেট্রোর সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশে কাজ করা ৬৮ শতাংশ জাপানি কোম্পানি আগামী দুই বছরের মধ্যে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। জাপানের ৬৫ শতাংশ কোম্পানি এখানে কাজ করে লাভ করতে সক্ষম হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালের জাপান পরিদর্শনের অন্যতম সফলতা ছিল– বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিনিয়োগ করে জাপানের অন্যতম বৃহৎ স্টিল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিপ্পন এবং আব্দুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করে জাপানের অন্যতম বৃহৎ গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হোন্ডা। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক জাপান সফরও এদেশে জাপানি বিনিয়োগের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে উন্নত,
সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ সুগম হবে।

মো. আব্দুল কাদের খান: পরামর্শক, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ