- মতামত
- অ-রাজনৈতিক
অ-রাজনৈতিক
গত শুক্রবার রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিএনপির এক সমাবেশে দলটির জেলা আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কবরস্থানে পাঠাইবার’ যে হুমকি দিয়াছেন, আমরা উহার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করিতেছি। বস্তুত যেই কোনো শুভ চিন্তার মানুষ এহেন হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাইবে। যেই কারণে বিএনপি নেতার উক্ত গর্হিত বক্তব্যের বিরুদ্ধে সমাজের বিভিন্ন মহলের পাশাপাশি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের নিন্দাই শুধু নহে; আওয়ামী লীগ এবং উহার বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন রাজপথে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জানাইতেছে। তবে এহেন পরিস্থিতিতে কাহারও আইন স্বীয় হস্তে না লইয়া আইনকে উহার নিজস্ব পথে চলিতে দেওয়াই যথার্থ বলিয়া আমরা মনে করি। অন্যথায় দেশে আইনের শাসনই শুধু প্রশ্নবিদ্ধ হইবে না; রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও বিশৃঙ্খলপূর্ণ হইতে পারে, যাহা কেবল গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকেই লাভবান করিবে। এ কারণে ‘বিএনপির রাজনীতিকে কবরে পাঠানো হইবে’ বলিয়া রবিবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেই হুমকি দিয়াছেন, আমরা উহাকেও সংগত বলিয়া মনে করি না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে দেওয়া আলোচ্য বিএনপি নেতার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে করা হইলেও এই প্রকার পাল্টা হুমকি শাসকদলীয় নেতাকর্মীর জন্য উস্কানিমূলক বার্তা দিবে, যাহা অগ্নিতে ঘৃতাহুতির শামিল বলিয়া বিবেচনা করিলে ভুল হইবে না।
অনস্বীকার্য, দেশের অতীত রাজনীতিতে এমন বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়াছে। যাহার ফলস্বরূপ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে তিক্ততা বিরাজ করিতেছে। উপরন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে আমাদের সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গত কয়েক দশক ধরিয়া ক্রমাবনতি ঘটিতেছে। আর এই সকল রাজনৈতিক অসুস্থতারই প্রতিফলস্বরূপ আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পাল্টাপাল্টি রাজনীতির চর্চা দেখিতেছি। ইহার সহিত সাম্প্রতিক সময়ে যুক্ত হইয়াছে আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হইবে তাহা লইয়া দুই দলের মধ্যে প্রবল মতবিরোধ। তবে ইহাও অস্বীকার করা যাইবে না, পরস্পর প্রতিপক্ষ হইলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিই বিগত ৫২ বৎসরের অধিকাংশ সময় ধরিয়া পালাক্রমে দেশটির শাসনকার্য পরিচালনা করিতেছে। ইহার ফলে জনগণের মধ্যে দুই দলেরই সমর্থন-ভিত অত্যন্ত মজবুত অবস্থায় আছে। অর্থাৎ আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হইলেই একটা দল অন্য দলটিকে ফুৎকারে উড়াইয়া দিতে পারিবে না।
এই অবস্থায় উভয় দলের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কোনো বিকল্প নাই; অন্তত দেশের সামগ্রিক বিকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করিতে হইলে। এই কথা আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে অনেকবারই বলিয়াছি, বিশেষত গত দেড় দশকে জাতীয় অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে উন্নতি ঘটিয়াছে, উহাকে আরও অগ্রগামী করিতে হইলে তো বটেই, টিকাইয়া রাখিতে হইলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত আবশ্যক। অর্থাৎ নির্বাচন পদ্ধতি লইয়া চলমান বিরোধেরও সমাধান করিতে হইবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ন রাখিয়া। স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্ব দিবার আরেকটি কারণ হইল, বহুবিধ কারণে দেশের অর্থনীতি গত কয়েক মাস ধরিয়া সংকটের মধ্যে বর্তমান, যাহা রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে গভীরতর হইতে পারে এবং সাধারণ জনগণের সহ্যক্ষমতার বাহিরে চলিয়া যাইতে পারে।
আমরা জানি, বর্তমানে সমগ্র জাতি একটা গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখিবার আশায় প্রহর গুনিতেছে। সেই আশাকে বাস্তবে রূপ দিবার প্রয়োজনে দেশি-বিদেশি উদ্যোগে সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রয়াসও চলমান। আরও গুরুত্বপূর্ণ হইল, প্রকাশ্যে দুই দলের নেতৃবৃন্দ পরস্পর মুখ দেখিতে রাজি না হইলেও, পর্দার অন্তরালে উভয় দলই একটা কার্যকর সংলাপের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করিতেছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের পথে অর্জিত এই অগ্রগতিকে কিছুতেই নস্যাৎ করিতে দেওয়া যায় না। তাই দুই দলেরই শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নিকট আমাদের আবেদন, পরস্পরের সমালোচনা করিবার সময় রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখুন এবং অবিলম্বে সমঝোতার মনোভাব লইয়া সংলাপের মাধ্যমে একটা স্বচ্ছ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পন্থা বাহির করুন।
বিষয় : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন