- মতামত
- পানিতে ডুবে আর কত মৃত্যু?
পানিতে ডুবে আর কত মৃত্যু?
সম্প্রতি ঝালকাঠিতে পুকুরে ডুবে মো. রমজান হোসেন (২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া তাসিন, সাদিয়ার মতো আরও অনেক শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংবাদ আমরা দেখেছি। ইউনিসেফের তথ্যমতে, ওপরে উল্লিখিত শিশুদের মতো ৪৬ জন নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু ঘটে পানিতে ডুবে। তার মানে, বছরে প্রায় ১৭ হাজার শিশুকে আমরা অকালে হারাচ্ছি। বুক খালি হচ্ছে হাজার হাজার মা-বাবার। শেষ হয়ে যাচ্ছে বিপুল সম্ভাবনা। এ ছাড়া গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে ২৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে।
পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটে আশপাশের জলাশয়ে। যার কারণে গ্রামেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। পানিতে ডুবে এত শিশুর মৃত্যুর কারণ হচ্ছে বাড়ির চারদিকে বিভিন্ন ধরনের জলাশয় যেমন পুকুর, নদী, ডোবা ও খাল-বিল। আমাদের দেশে অপরিকল্পিতভাবে খনন করা হয় অধিকাংশ পুকুর। পুকুর বা ডোবা থাকে বাড়ির সীমানা বা ঘরের ২০ মিটারের মধ্যে। অন্যদিকে মা-বাবারা ব্যস্ত থাকেন কাজে। অধিকাংশ পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে। এই সময় শিশুর স্বজনরা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ ছাড়া শিশুদের সাঁতার না জানাও একটা বড় কারণ। ৫ বছরের শিশুদের অবশ্যই সাঁতার শেখাতে হবে।
শহরের অধিকাংশ স্কুলে তো মাঠই নাই; সাঁতার শিখবে কোথায়– এই প্রশ্নের উত্তর হতে পারে, যারা সাঁতার শিখবে, তারা বাড়তি ফি দেবে এবং সপ্তাহের এক দিন কোনো পুকুর বা সুইমিং পুলে তাদের সাঁতার শেখানো হবে।
সাঁতার শুধু শিশুদের শেখালে হবে না। এটি শিখতে হবে পিতামাতাকেও। কারণ পানিতে ডুবে মারা যান প্রাপ্তবয়স্করাও। ‘জালালের গল্প’ সিনেমায় আমরা দেখতে পাই সাঁতার না জানা জালালের পানিতে ডুবে অসহায় অবস্থায় মৃত্যু। তাই সাঁতার শেখাটা আমাদের দেশে বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।
বলা হয়– ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’। আমরা যদি শিশুদের রক্ষা করতে না পরি তাহলে তারা কীভাবে ভবিষ্যতে পথপ্রদর্শক হবে? এই ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। দেশে অনেক বিনিয়োগ হচ্ছে, মেগা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু শিশুরা যেন সাঁতার শিখতে পারে, এমন বিষয়ে কোনো বাস্তব কাজ হচ্ছে বলে চোখে পড়ে না।
সাঁতার শেখাটা কোনো বিলাসিতা নয় বরং এটা একটা জীবন রক্ষাকারী দক্ষতা ও কৌশল। এটি শিখলে নিজেকে যেমন বাঁচানো যাবে; বাঁচানো যাবে অন্যকেও। যাঁরা নীতিনির্ধারক রয়েছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ– শহর, গ্রাম উভয় স্থানেই সাঁতার শেখার মতো প্রচুর অবকাঠামো তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হোক, যেন সেখানে ধনী-গরিব সবাই সাঁতার শিখতে পারে।
কর্মসূচি কর্মকর্তা, কারিতাস বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন