শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নকালীন একাডেমিকের পাশাপাশি অন্য যে অতিরিক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তাকে সহশিক্ষা কার্যক্রম বলে। যেমন বিএনসিসি, বিতর্ক, লেখালেখি, রোভার, স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, নাচ, গান, নাটক, অভিনয়, আবৃত্তি ইত্যাদি। যেহেতু সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত, সেহেতু এগুলো শিক্ষার বাইরে বলে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষা কার্যক্রমে বেশ আগ্রহী।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লম্বিটুডিনাল স্টাডি অব অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ পরিচালিত স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী কোনো না কোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত। আরও কিছু গবেষণা দেখা যায়, সহশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরে পড়া, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার আশঙ্কাও কম এবং উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় উপস্থিত। তা ছাড়া বিদ্যালয়ের নিয়মিত কাজে সাফল্য ও অর্জনের হারও তাদের বেশি। বিদ্যালয়ের সহশিক্ষা সংগঠন এবং এ কার্যক্রমে জড়িত থাকা বিকাশমান প্রজন্মের জন্য বেশ উপকারী। সহশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত গবেষণা থেকে জানা যায়, তাদের সক্রিয় বন্ধুদল সহশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত না থাকাদের তুলনায় অনেক বড়। জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু এবং অভিবাসী কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে একই রকম গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের সংখ্যালঘু কিশোর-কিশোরীরা তুলনামূলক কম বন্ধুবৎসল ছিল এবং তাদের সম্পর্কে জড়িত হওয়ার প্রবণতাও কম। সে ক্ষেত্রে সহশিক্ষা কার্যক্রম সামাজিকীকরণকে দ্রুত ও বেগবান করেছে।

একজন আদর্শ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা করার মূল উদ্দেশ্য শিক্ষা অর্জন করা হলেও মননের বিকাশ, মানসিক বিকাশ, যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের বিকাশ, সময়ানুবর্তিতা, সৃজনশীলতার মতো দক্ষতা অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের চর্চা একজন শিক্ষার্থীর ওপর চাপ কমিয়ে আনে এবং মনোযোগ বিকেন্দ্রীকরণে সহায়তা করে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সুস্থ বিনোদন ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহশিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়