গ্রীষ্মের এই মৌসুমে জ্যৈষ্ঠ মাস নিয়ে এসেছে প্রকৃতিতে নানা ফলের সমাহার। যে কারণে এই মাসকে মধুমাস বলা হয়। এই মৌসুমে সব ধরনের ফলের মধ্যে আম উল্লেখযোগ্য। মৌসুমজুড়েই থাকে নানা প্রজাতির সুস্বাদু আম। গুটি আম দিয়ে শুরু হয়েছে মধুমাস। এরই মধ্যে বাজারে পাওয়া এসেছে হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম। কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসবে আম্রপালি। পাশাপাশি থাকবে রংপুর অঞ্চলের বিখ্যাত হাঁড়িভাঙা আম। শেষের দিকে ফজলি আম বাজারে এলেও মাঝখানে আরও অনেক জাতের আম পাওয়া যাবে। দিনাজপুর ও সোনারগাঁর লিচুতে সয়লাব হবে বাজার। এরই মধ্যে দেশি জাতের লিচু বাজারে চলে এসেছে।

আম পছন্দ করে না, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। বাজারে ফলের দোকান, রাস্তার ধারে হকারের ডালায় সাজানো থাকে নানা প্রজাতির আম। কিন্তু বাজার থেকে যে আম কিনে খাচ্ছি, তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ নয় তো? বাজার থেকে আম কিনতে গেলে ক্রেতাদের মনে এই আতঙ্ক কাজ করে।

আম ব্যবসায়ীরা এখন তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে গাছ থেকে অপরিপক্ব আম পেড়ে ক্যালসিয়াম কার্বাইড জাতীয় কেমিক্যাল প্রয়োগ করে আম পাকাচ্ছে। পাকা আম যাতে না পচে সে জন্য রাতে দোকান বন্ধের আগে ফরমালিন স্প্রে করা হয়। ভোরে এই আমের রাসায়নিক পরীক্ষা করা হলেও তাতে ফরমালিন ধরা পড়ে না। ক্যালসিয়াম কার্বাইডে ক্ষতিকর দুটি উপাদান আর্সেনিক ও ফসফরাসের মিশ্রণ থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। উচ্চমাত্রার কার্বাইড প্রয়োগের ফলে এই আম আর্সেনিক ও ফসফরাস দ্বারা দূষিত হয়ে শরীরে প্রবেশ করে মানবদেহের ক্ষতি করছে। পরোক্ষভাবে শরীরের নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এ পদ্ধতিতে আম পাকিয়ে বাজারজাত করছে। এভাবে রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে আমের প্রকৃত স্বাদ ও মান নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে ভোক্তাও শিকার হচ্ছেন প্রতারণার।

শুধু আম নয়; অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রায় সব ধরনের ফলই একইভাবে রাসায়নিক প্রয়োগ করে বাজারজাত করছে। প্রবাদ আছে– ‘প্রতিদিন একটা আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগে না।’ কিন্তু এই কথা এখন কতটুকু সত্য? কোনটা কেমিক্যালযুক্ত, সেটা বাইরে থেকে বোঝা কঠিন। আম ব্যবসায়ীদের সমাজের কথা, ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নৈতিকতা অবলম্বন করা উচিত। বাজার ও আড়তে অভিযান চালিয়ে কেমিক্যালযুক্ত আম ধ্বংসসহ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় আম পাকানো বন্ধে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

শিক্ষার্থী, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, খুলনা