
খা বার নিয়ে প্রবীণদের অসন্তোষ, বিরক্তি প্রায়ই আমরা শুনতে পাই। খাবার মজা হয়নি; তেল-নুন-ঝাল-মসলা মনমতো হয়নি। রান্নার ধরন পছন্দ হয়নি। যদিও এসব অভিযোগ তেমন আমলে নেওয়া হয় না।
বয়স বৃদ্ধির পাশাপাশি জিহ্বার স্বাদ গ্রহণ করার ক্ষমতাও কমতে থাকে। পান চুন সুপারি জর্দা খাওয়ার কারণে মুখে স্বাদ গ্রহণের মাত্রা কমে যায়। যাঁদের দাঁত নেই তাঁরা চিবিয়ে খেতে না পারায় অনেক সময় পছন্দের খাবার গ্রহণের আগ্রহ কমে যায়। এসব কারণেও প্রবীণদের মধ্যে খাবার গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়। আমরা পরিবারের শিশুর জন্য আলাদা খাবার প্রস্তুত করি তার চাহিদা মোতাবেক। কিন্তু প্রবীণদের জন্য আলাদা খাবার প্রস্তুত সাধারণত করা হয় না। অথচ শিশুদের যেমন, তেমনই প্রবীণদের খাবারেও চাই বিশেষ মনোযোগ।
এ ছাড়া রোগ-শোক, হতাশা, বিষণ্নতা থেকেও অনেক সময় প্রবীণরা খাবার গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেন। কিন্তু ঠিক সময়ে পরিমিত খাবার গ্রহণ না করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল শরীরে নানা ধরনের রোগের বসবাস শুরু হয়। প্রবীণদের বয়স বাড়লে এমনিতেই নানা রোগের আক্রমণ শুরু হয়। আসে খাবারদাবারে নিয়ন্ত্রণ। এটা খাওয়া যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না বলে প্রায়ই সতর্ক করা হয়। এভাবেই প্রবীণরা নিজেদের পছন্দের খাবার থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন।
নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের রয়েছে সহজাত আকর্ষণ। প্রবণীরাও তা থেকে বিচ্ছন্ন নন। যেসব খাবার গ্রহণে চিকিৎসকের নিষেধ রয়েছে; সুযোগ পেলে প্রবীণরা সেটাই মাঝেমধ্যে খেয়ে ফেলেন। গভীর রাতে ফ্রিজ খুলে মিষ্টি, রসগোল্লা, দই, পায়েস, ফিরনি খাওয়ার গল্প আমরা প্রায়ই শুনতে পাই। পার্কে হাঁটতে এসে হোটেল-রেস্টুরেন্টে তেহারি, নেহারি, পায়া, পরোটা, ভাজি, ডাল, মাংস, ডিম দিয়ে নাশতা করতে দেখা যায়। পরিবারের অন্য সদস্যদের উচিত খাবার নিয়ে প্রবীণদের এই আকর্ষণ ও নিষেধের মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করা। ছেলেমেয়ে, নাতনাতনিরা অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কেক, পেস্ট্রি, পিৎজা, বিরিয়ানি, কাবাব, মিষ্টি, কেএফসি, নুডলসসহ বিভিন্ন রকমের খাবার বাসায় নিয়ে আসে। সেসব খাবার থেকে প্রবীণদেরও নিরাপদ পরিমাণমতো দেওয়া যেতে পারে।
প্রতিদিন কমপক্ষে একবেলা খাবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খেতে পারলে প্রবীণরা ভালো থাকেন। খাবার টেবিলে সবাই একসঙ্গে খেতে বসলে তাঁরাও খাবার গ্রহণে উৎসাহিত হবেন। একা একা খাবার গ্রহণ তাঁদের জন্য কষ্টকর। যেসব প্রবীণ একা থাকেন এবং একা খাবার গ্রহণ করেন তাঁরা পুষ্টিহীনতার শিকার হতে পারেন। কিছু প্রবীণ নিজে খাবার গ্রহণ করতে পারেন না। তাঁদেরকে খাইয়ে দিতে হয়।
আমাদের পরিবার, সমাজে প্রবীণবান্ধব খাবার তৈরি করা হয় না। আয়োজকরা ভুলে যান প্রবীণরাও পরিবারে বসবাস করেন। বিয়েবাড়ি, জন্মদিন, মেজবান, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পোলাও, কোর্মা, রেজালা, কাবাব, রোস্ট, কাচ্চি, বোরহানি, ফিরনি, মিষ্টি, দই, জর্দা দেওয়া হয়, যা বেশিরভাগ প্রবীণের জন্য সহজপাচ্য নয়। কখনও তা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ভাগ্যবশত সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রবীণবান্ধব খাবার রাখার ক্ষেত্রে আশ্চর্য রকম নীরবতা পালন করা হয়।
হাসান আলী: প্রবীণবিষয়ক গবেষক
মন্তব্য করুন