অর্থনীতিবিদ, রাজনীতি বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও উন্নয়নকর্মী ড. বদিউল আলম মজুমদার ‘সুজন’ তথা সুশাসনের জন্য নাগরিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ‘দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সত্তরের দশকের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরবর্তী সময়ে দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৯১ সালে বদিউল আলম মজুমদার দেশে ফিরে ক্ষুধামুক্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় হন। তিনি জনবান্ধব আইন ও নীতি প্রণয়ন, শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। ১৯৪৬ সালে কুমিল্লার লাকসামে তাঁর জন্ম।


সমকাল: দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পর আপনি ১৯৯১ সালে দেশে ফেরেন। কোন বিশেষ তাড়না এ ক্ষেত্রে অনুভব করেছেন?

বদিউল আলম মজুমদার: ছোটবেলা থেকেই ব্যতিক্রমী ছিলাম। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই টিফিনের বিরতিতে খবরের কাগজ পড়ার জন্য পাশের দোকানে গিয়ে লাইন ধরতাম। তখন থেকেই ছিলাম রাজনীতি সচেতন। পরবর্তী সময়ে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন ও ৬ দফা আন্দোলনেও জড়িত ছিলাম। ’৬৯-এর  গণঅভ্যুত্থানে তদানীন্তন ইকবাল হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমারও ক্ষুদ্র অবদান ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত ছিলাম এবং সেখান থেকেই প্রবাসী সরকারকে সহায়তা প্রচেষ্টায় অংশ নিই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ার চেষ্টা চালাই। যে দেশটির স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে আমার ছোট্ট ভূমিকা ছিল, সেই দেশের জন্য একটি সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার তাগিদ থেকেই দেশে ফিরে আসি। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমি অধ্যাপনা করতাম; নাসার মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি এবং সৌদি রাজপরিবারের অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করেছি।

সমকাল: দেশে ফেরার পর গত তিন দশক আপনি হাঙ্গার প্রজেক্টের সঙ্গে কাজ করছেন। ক্ষুধামুক্তির এই মিশনে যোগ দেওয়ার নেপথ্য কারণ কী ছিল?

বদিউল আলম মজুমদার: আমি এবং কিছু সহকর্মী মিলে হাঙ্গার প্রজেক্টের পক্ষ থেকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্তির কাজ চালিয়ে আসছি। গতানুগতিক ধারায় মানুষকে অজ্ঞ, অসহায়, অক্ষম ও ‘সমস্যা’ মনে করে সেবা দেওয়ার মাধ্যমে ‘উপকারভোগী’তে পরিণত করা হয়। আমরা মনে করি, সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ সক্ষম ও সৃজনশীল এবং তারাই তাদের ভবিষ্যতের কারিগর হতে পারে। তারা আত্মশক্তিতে বলীয়ান হলে এবং একক ও দলবদ্ধভাবে কাজ করলে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে পারে। ফুলের আপনা থেকেই ফোটার যে ক্ষমতা আছে, আমরা সে ক্ষেত্রে মালীর কাজ করে থাকি।

সমকাল: আত্মনির্ভরশীলতা বা আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব?

বদিউল আলম মজুমদার: মানুষকে কিছু দেওয়া বা মানুষের জন্য করে দেওয়ার মাধ্যমে তার সাময়িক সুফল আসতে পারে। কিন্তু এর মাধ্যমে পরনির্ভরশীলতার মানসিকতা তৈরি হয়। যাতে প্রকারান্তরে তার মধ্যে ভিক্ষুকের মানসিকতা তৈরি হয়, তাতে ব্যক্তির আত্মমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। স্থায়ীভাবে ক্ষুধামুক্তির কাজটা মানুষ যাতে নিজেরাই করতে পারে, সে লক্ষ্যেই আমরা তাদের উজ্জীবিত ও ক্ষমতায়িত এবং তাদের কমিউনিটিকে সংগঠিত করছি। আমরা সারাদেশে পৌনে দুইশ ইউনিয়নে স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি এবং এক দল স্বেচ্ছাব্রতীর সমন্বয়ে এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছি। এর মাধ্যমে মানুষের জীবনমানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। নারী ও কন্যাশিশুর অবস্থানে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। কম বিত্তের মানুষ, বিশেষত নারীদের নেতৃত্বে প্রায় দুই হাজার সংগঠন গড়ে উঠেছে। তারা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের কারিগরে পরিণত হচ্ছে। আমরা লাখখানেক ছেলেমেয়ের সঙ্গে কাজ করছি; যাতে তাদের মেধা, সৃজনশীলতা ও নেতৃত্বের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটে। তারা যোগ্য নাগরিকে পরিণত হতে পারে। একই সঙ্গে সমাজে শান্তি-সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা ৭৩টি উপজেলায় কাজ করছি। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করে কাজ করছি।

সমকাল: কাজটি আপনারা কীভাবে করছেন?

বদিউল আলম মজুমদার: আমরা মানুষকে নানাভাবে উজ্জীবিত করছি। এক দল স্বেচ্ছাব্রতী উজ্জীবক, তরুণ ও নারী নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছি। উজ্জীবক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এক দল স্বেচ্ছাব্রতী তৈরি করা হচ্ছে, যারা অন্যদের জাগ্রত ও সংগঠিত করার কাজে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে। এসব স্বেচ্ছাব্রতী ‘বিকশিত নারী’, ‘ইয়ুথ এন্ডিং  হাঙ্গার’, ‘কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম’, ‘পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপ’ ইত্যাদি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। তারা উন্নয়নকে আন্দোলনে পরিণত করছে। তারাই পরিবর্তনের কারিগরে পরিণত হচ্ছে। আমাদের স্বেচ্ছাব্রতীরা ইউনিয়ন পরিষদের সামর্থ্য বিকাশ এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে সংগঠিত সামাজিক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। তারা নারীর প্রতি বঞ্চনা ও বৈষম্যমূলক সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়াও আমরা স্থানীয় জনগণ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তৃণমূলের নাগরিক সমাজ এবং জনগণ– এই চার মূল শক্তির মধ্যে কার্যকর অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। হাঙ্গার প্রজেক্ট বর্তমানে বাংলাদেশের স্বেচ্ছাশ্রমভিত্তিক বৃহত্তম স্বেচ্ছাব্রতী সংগঠন।

সমকাল: ক্ষুধামুক্তি আন্দোলনের পাশাপাশি সুজন প্রতিষ্ঠার তাগিদ অনুভব করলেন কেন?

বদিউল আলম মজুমদার: আমি যখন ‘দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর সঙ্গে যুক্ত হই, তখন আমরা দুই ধরনের কৌশল গ্রহণ করি। প্রথমত ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। যেটা ইতোমধ্যে বলেছি, একটা প্রতিবন্ধকতা ছিল পরনির্ভরশীলতার মানসিকতা, হতাশা-নিরাশা। এগুলো দূর করার জন্য আমরা মানুষকে উজ্জীবিত এবং তাদের সামর্থ্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা করি। এ লক্ষ্যে আমরা প্রথমে ‘প্রত্যাশা, প্রতিশ্রুতি ও কার্যক্রম’ কর্মশালা পরিচালনা করি। এর মাধ্যমে আমরা অসংখ্য উজ্জীবক, নারীনেত্রী ও ইয়ুথ লিডার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে আমরা সফলতা দেখাতে পারলেও সমাজে বেড়ে যায় দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন ও মানুষের অধিকারহীনতা তথা গণতন্ত্রের ঘাটতি ও সুশাসনের অভাব। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানো তথা রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তনের লক্ষ্যেই প্রফেসর মোজাফফ্‌র আহমদ এবং আমরা কয়েকজন ‘সুজন’ গড়ে তুলি।

সমকাল: সুজনের অগ্রাধিকার কী?

বদিউল আলম মজুমদার: সুজন মূলত সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজ হিসেবে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে আমাদের যে গণতান্ত্রিক সংকট রয়েছে, তা বিহিতের ওপর জোর দিচ্ছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী উন্নত-সমৃদ্ধ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কথা বলেছেন। কিন্তু তার আগে আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হতে হবে। মধ্যম আয়ের ফাঁদ বলে একটা কথা আছে। যে ফাঁদে আমরা পড়ে যেতে পারি, যা অনেক দেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ঘাটতি এ ফাঁদ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। সুশাসন প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা থাকলে আমাদের মধ্যম আয়ের স্বপ্ন আরও প্রলম্বিত হতে পারে। তাই সেদিকে আমরা জোর দিচ্ছি। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াসহ রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রিয় দেশমাতৃকাকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সে জন্য আমরা আইনের শাসন, মানবাধিকার সংরক্ষণ, সমতা, ন্যায়পরায়ণতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি তথা সমাজের সর্বস্তরে গণতন্ত্রের চর্চা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নাগরিকদের সচেতন, সক্রিয়, সোচ্চার ও সংগঠিত করার কাজ করছি।

সমকাল: ক্ষুধা নিবারণ ও গণতন্ত্র চর্চা– এ দুই বিষয় অর্জনের পথে আমাদের অবস্থান কোথায়?

বদিউল আলম মজুমদার: ক্ষুধা ও দারিদ্র্য অবসানের লক্ষ্যে নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। সেটি পূরণে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। তা ছাড়া অনেক অবকাঠামো সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের দেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। তবে আমাদের ‘উন্নয়ন’ হলেও সব ক্ষেত্রে ‘উন্নতি’ হয়নি। এ ক্ষেত্রেই আমাদের ঘাটতি হতাশাব্যঞ্জক। শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন বিস্তর। পুষ্টিহীনতা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্বলতা, সুশাসনে ঘাটতি, সব ক্ষেত্রে আইনের শাসন নিশ্চিত না হওয়া, মানবাধিকার লঙ্ঘন, অধিকারহীনতা ইত্যাদি বিদ্যমান।

সমকাল: আপনাকে নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টিই সামনে আসছে বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণই কি আপনার কাজের ফোকাস?

বদিউল আলম মজুমদার: আমরা যেমন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছি, তেমনি সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজও এগিয়ে নিচ্ছি। উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষ্য অর্জনের পথে অনেক কাজ করার আছে। আমরা দেখছি, ক্ষুধামুক্তি কিংবা দারিদ্র্য বিমোচনের কাজটি অনেকেই করে আসছেন। সে তুলনায় নাগরিকের অন্যান্য অধিকার নিশ্চিতে তথা সুশাসন কিংবা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ তেমন হচ্ছে না। দ্বিতীয়টিতে অনেকেই সময় ও শ্রম দিচ্ছেন না। আমরা দুটো কাজই করছি। যেহেতু দ্বিতীয় কাজটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে আমরা অগ্রাধিকার ঠিক করছি। সে জন্যই হয়তো অনেকে আমার কাজের ক্ষেত্রে সুশাসন ও নাগরিক অধিকারের বিষয়টি বেশি দেখেন।

সমকাল: অনেকে বলেন, খুঁত ধরাই আপনাদের কাজ। সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করেন না।

বদিউল আলম মজুমদার: সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা আমরা অবশ্যই করি। তবে আমরা সরকারের জনসংযোগকর্মী নই। যাঁরা বলছেন খুঁত ধরাই আমাদের কাজ, তাঁদের আসলে সিভিল সোসাইটি নিয়ে ধারণাই নেই। আমাদের কাজ মানবাধিকার নিশ্চিত করা, সরকারকে দায়বদ্ধ করা। সরকার যাতে সুশাসনের পথ থেকে বিচ্যুত না হয়, সেটা আমরা নজরদারি করি। সে ক্ষেত্রে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকাই আমাদের কাজ। ফলে এসব ক্ষেত্রে সংকট দেখলেই আমরা সেটা বলার চেষ্টা করি। আমরা যেমন নির্বাহী বিভাগের ওপর নজরদারির চেষ্টা করছি, তেমনি সরকারের অন্যান্য বিভাগও আমাদের নজরদারির বাইরে নয়। ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও মানুষের স্বার্থের বাইরে কিছু গেলে সেটা ধরিয়ে দেওয়া আমরা দায়িত্ব মনে করি।

সমকাল: এপ্রিলে বিবিএসের প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছে, দেশে দারিদ্র্য কমেছে। বাস্তবতা কী বলে আপনি মনে করেন?

বদিউল আলম মজুমদার: দেশে দারিদ্র্যের হার কমছে– এটি নিঃসন্দেহে ভালো বিষয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের কাজও আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষের হার কমিয়ে আনতে হবে‌। কিন্তু দারিদ্র্যের হার কমলেও বৈষম্য বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে।    

সমকাল: বৈষম্য ব্যাপক বড়ছে কেন?

বদিউল আলম মজুমদার: উন্নয়ন কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে। সমাজের উচ্চবিত্তরাই সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। তারাই সবকিছু করায়ত্ত করছে। এপ্রিলে প্রকাশিত খানা জরিপের তথ্য বলছে, পরিবারপ্রতি মাসিক আয় এখন ৩২ হাজার ৪২২ টাকা। এর মাধ্যমেই বোঝা যায়, নিম্নবিত্তের পরিবারগুলোর আয় আর উচ্চবিত্তের আয়ের মধ্যকার ফারাক কত। আমাদের এখানে অতি ধনী হওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট। স্বজনতোষণ, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সুবিধার কারণে এক দল কোনো কষ্ট না করেই অতি ধনী হয়ে যাচ্ছে। আমাদের উন্নয়ন কৌশলই সেই বৈষম্য বাড়াচ্ছে।

সমকাল: মানুষ কি আপনাদের কাজে সাড়া দিচ্ছে? 

বদিউল আলম মজুমদার: আমাদের কাজের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ধারণাগত যে পরিবর্তন এসেছে, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশের বড় সম্পদ হলো মানুষ। এখানকার মানুষ কর্মঠ। সম্পদ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে তাদের জাগ্রত ও দক্ষ করা জরুরি। এ কাজে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। 

সমকাল: নির্বাচনের বছরে আমরা রয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক সমঝোতা এখনও দৃশ্যমান নয়। আপনার পরামর্শ কী?

বদিউল আলম মজুমদার: প্রধানমন্ত্রী যেমন বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন চান; তেমনি বিরোধী দলও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে। এখন সমঝোতার মাধ্যমে সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয়। এ জন্য সরকার ও বিরোধী দল সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা দেখছি, নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। বিষয়টি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমাদের জন্য অমর্যাদাকর। তবে যেসব অপরাধের কথা তারা বলছে, আমাদের আরপিও তথা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ীও সেগুলো অপরাধ। সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায় আমাদেরই। সে জন্য মার্কিন ভিসা নীতি রাজনীতিবিদরা ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। এখন সমঝোতার পরিবেশ তৈরিতে তাঁদের দায়িত্বশীল ভূমিকা আমরা দেখতে চাই।

সমকাল: সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টে আপনার ৩০ বছরের পথচলায় আমরা আপনাকে অভিনন্দন জানাই।

বদিউল আলম মজুমদার: আপনাকেও ধন্যবাদ। সমকালের জন্য শুভকামনা।