- মতামত
- রাস্তায় বের হলেই কামড়ে দিচ্ছে পাগলা কুকুর, ভ্যাকসিন সংকট
রাস্তায় বের হলেই কামড়ে দিচ্ছে পাগলা কুকুর, ভ্যাকসিন সংকট

জামালপুর শহরবাসীর মধ্যে কুকুর আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাস্তায় বের হলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্ষেপা কুকুরের কবলে পড়ছেন পথচারীরা। কামড়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান জখম করে ফেলছে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন জনবহুল রাস্তায় দলবদ্ধ পাগলা কুকুরের আক্রমণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নারী-শিশুসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ভ্যাকসিন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে প্রতিদিন জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভিড় করছেন আক্রান্ত মানুষ ও তাদের স্বজনরা। রোগীদের বিশেষ ব্যবস্থায় সেবা দেওয়া হলেও হাসপাতালে ‘র্যাবিস ভ্যাকসিন’ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন অন্যরা। গুরুত্বপর্ণ ভ্যাকসিনটি চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। অনেকেই ভ্যাকসিন পেতে ছুটে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
জামালপুর শহরের জিগাতলা, ফুলবাড়িয়া, রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরি মোড়, বউবাজার, পাঁচরাস্তা মোড়, সর্দারপাড়া, শেখের ভিটা, বগাবাইদ, কাচারীপাড়া, শাহাপুর ও আমলাপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় পাগলা কুকুরের উৎপাত বেড়ে গেছে। গত তিন দিনে এসব এলাকায় শতাধিক মানুষকে কামড়ে দিয়েছে এসব কুকুর। অনেকের শরীরের মাংসপিণ্ড তুলে নিয়েছে। কুকুরের আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল আরোহী এবং বাসাবাড়ির লোকজন। শহরজুড়ে কুকুর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক অভিভাবক কুকুরের ভয়ে ছেলেমেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
শহরের জিগাতলা এলাকার গৃহবধূ পুষ্প বেগম, ফুলবাড়িয়ার দুলাল উদ্দিন ও বউবাজারের নূর ইসলামসহ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকে জানান, জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে র্যাবিস ভ্যাকসিন পাননি। বাধ্য হয়ে চড়া দামে বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের ভাষ্য, প্রতিদিন কুকুরে কামড়ানো রোগীদের ভিড় জমে যাচ্ছে। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আতঙ্কিত না হওয়ার পরার্মশ দিয়েছেন তিনি।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উত্তম কুমার সরকার বলেন, জলাতঙ্ক না হলে সাধারণতো কুকুর মানুষকে কামড়ায় না। তাই কুকুরের যাতে জলাতঙ্ক না হয় সেজন্য গত বছর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের সমন্বয়ে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কুকুর ধরে ধরে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বছর সেই প্রকল্পটি নেই।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর দাবি, কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত মানুষকে ভ্যাকসিন দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আর আক্রান্ত গবাদি পশুকে ভ্যাকসিন দিচ্ছে পশু সম্পদ বিভাগ। পাগলা কুকুরকে জলাতঙ্ক মুক্ত করার ভ্যাকসিন তাদের কাছে নেই। যে কারণে সেই প্রোগ্রাম হাতে নিতে পারছেন না।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান সোহানের ভাষ্য, এ পর্যন্ত কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত অর্ধশত মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। কুকুরে কামড়ানো রোগীদের দুটি ভ্যাকসিন দিতে হয়। একটি ভ্যাকসিনের সরবরাহ আছে হাসপাতালে, রোগীদের সেগুলো দেওয়া হচ্ছে। র্যাবিস ভ্যাকসিনের সরবরাহ না থাকায় সেটি বাইরে থেকে সংগ্রহ করেছেন রোগীরা। এ ভ্যাকসিনের জন্য জরুরি চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
জামালপুর পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, কুকুর নিধন না করার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। পৌরসভায় পাগলা কুকুরের ভ্যাকসিন নেই। তবে কুকুরের উৎপাত থেকে শহরবাসীকে রক্ষা করতে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে কুকুরের শরীরে প্রয়োগের জন্য জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন