ঝড়ে বিদ্যালয়টির টিনের চাল উড়ে গেছে। পাশেই গাছতলায় বসে পাঠ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রায় আট মাস ধরে এভাবেই পাঠদান চলছে বিদ্যালয়টিতে। বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার জাদুড়িয়া গ্রামের নারিকেলবাড়িয়া সড়কের পাশে জাদুড়িয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশপাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় জাদুড়িয়া গ্রামের ছোট ছোট শিশুকে যেতে হতো অনেক দূরের স্কুলে। এ জন্যই স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালে গড়ে ওঠে বিদ্যালয়টি।

এ বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। শিশু থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৬। প্রতিদিন দুই শিফটে ভাগ করে চলে পাঠদান। শিক্ষকরা বিনা বেতনে নিয়মিতই পাঠদান করছেন। শিক্ষার্থীদের সরকারি পাঠ্যবই দেওয়া হচ্ছে।  

আট মাস আগে ঝড়ে বিদ্যালয়টির টিনের চাল উড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরজা-জানালাসহ অন্যান্য আসবাব। এর পর থেকেই খোলা জায়গায়, গাছতলায় ঝড়-বৃষ্টির সময় কখনও বা অন্যের কাচারিঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। এত সংকটের মধ্যেও শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে আসছে স্কুলে। সানন্দে শিক্ষকরাও পাঠদান করছেন।

জাদুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সিকমাল মণ্ডল জানান, এই বিদ্যালয় গড়ে ওঠার পর জাদুড়িয়া, মুনুড়িয়া ও কুশাবাড়িয়া এলাকার অনেকেই পড়াশোনা করছে। তবে কিছুদিন আগে ঝড়ে বিদ্যালয়ের টিনের চালা উড়ে যাওয়ার কারণে মাঠের আমগাছতলায় ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।

জাদুড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া খাতুন বলে, ‘আগে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতাম। এখন খোলা জায়গা আমগাছের নিচে বসে ক্লাস করি। খুব কষ্ট হয় আমাদের।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বপ্না পারভীন বলেন, তাঁরা বিনা বেতনে পাঠদান করে যাচ্ছেন। শুধু সরকার নির্ধারিত হারে শিক্ষার্থীদের থেকে ফিস নেওয়া হয়। বাকি সব খরচ তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে বহন করেন। তবু আশায় আছেন, কখনও সরকারীকরণ হলে সুবিধাদি পাবেন। পাঠদানে কোনো ঘাটতি নেই বলে দাবি তাঁর।

জাদুড়িয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল আক্তার জানান, আর্থিক সংকটের কারণে টিনের চালসহ অন্যান্য মেরামত কাজ করতে পারছেন না। সরকারিকরণের সব শর্তই পূরণ করা হয়েছে। শিক্ষা অফিসে আবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। সরকারের কাছে তাঁর দাবি, বিদ্যালয়টি সরকারীকরণে যেন উদ্যোগ নেওয়া হয়। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম জানান, স্কুলটি সরকারি আওতাভুক্ত না হওয়ায় তাঁরা মেরামতে উদ্যোগী হতে পারছেন না।