- মতামত
- অবহেলিত বানিয়াচংয়ের মাকালকান্দি গ্রাম
অবহেলিত বানিয়াচংয়ের মাকালকান্দি গ্রাম

স্বাধীনতার ৫২ বছরেও গড়ে ওঠেনি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। নেই কোনো ব্রিজ, কালভার্ট বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র নেই, নেই স্যাটেলাইট ক্লিনিক। একটি মাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নেই তেমন কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা।
তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উৎকর্ষে উন্নয়নের পথে ধাবমান বাংলাদেশের কোনো প্রান্তে এমন একটি গ্রামের কথা কল্পনাই করা যায় না। অথচ এটিই হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ৬ নম্বর কাগাপাশা ইউনিয়নের মাকালকান্দি গ্রামের বাস্তব চিত্র। যেখানে বসবাস করছেন দুই সহস্রাধিক মানুষ।
নদী খাল বিলে ঘেরা এই গ্রামটি দৈর্ঘ্যে প্রায় এক কিলোমিটার। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাখা বরাক নদী। সেতু না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে ডিঙ্গি নৌকার ওপর ভরসা করে চলাচল করতে হয় গ্রামবাসীকে। মাকালকান্দি নামের এমন একটি কৃষিপ্রধান গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার আশাতীত উন্নয়ন না হওয়ায় কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না।
এ এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে মাকালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরিচালনা কমিটির সভাপতি শোভা রানী দাশ জানান, বিদ্যালয়টিতে ৬ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও শিক্ষকরা এখানে থাকতে চান না। বাধ্য হয়ে দুই-একজন শিক্ষক দিয়ে চালাতে হচ্ছে পাঠদান। শিক্ষার্থীদের প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে আসতে হয় স্কুলে।
গ্রামের কৃষক গৌরাঙ্গ দাশ আক্ষেপের সুরে জানান, এখানকার কয়েক হাজার মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রাস্তাঘাটের উন্নতি না হওয়ায় কৃষিপণ্য পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে অন্য এলাকার মানুষ এই গ্রামে আত্মীয়তা পর্যন্ত করতে চায় না।
পৃথ্বিশ চন্দ্র দাশ নামে এক বাসিন্দা জানান, মাকালকান্দি গ্রামে নেই কোনো স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র বা স্যাটেলাইট ক্লিনিক। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদেরও তেমন যাতায়াত নেই। অসুখ-বিসুখে গ্রাম্য চিকিৎসক আর ঝাড়ফুঁকেই ভরসা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সুজিত দাশ বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি চেষ্টা করছি ওয়ার্ডের উন্নয়ন করার। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের প্রাণের দাবি গ্রামটির সার্বিক উন্নয়নসহ রাস্তা-ঘাটের উন্নতি করা।’
৬ নম্বর কাগাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী জানান, মাকালকান্দি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ হতদরিদ্র। চেষ্টা চলছে অবস্থা উন্নয়নের। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য তাদের রাস্তা-ঘাটসহ সার্বিক উন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী জানান, স্মৃতিসৌধসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের চেষ্টা করছি। আগামী শুষ্ক মৌসুমে বানিয়াচং থেকে মাকালকান্দি হয়ে দৌলতপুর পর্যন্ত ৬ মাস ব্যবহার উপযোগী রাস্তাটি করতে পারব বলে আশা করছি। এছাড়া আরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিকল্পনাধীন আছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি হারান দাশ জানান, গ্রামের প্রবেশদ্বারে শাখা বরাক খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলে গ্রামবাসী শুষ্ক মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলাচল করতে পারবে। এ ছাড়া গ্রামের দুই পাড়ার মধ্যে একটি বেইলি সেতু হলে দুই পাড়ার মানুষ স্কুলসহ বিভিন্ন কাজে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় আসা-যাওয়া করতে পারবে।
মন্তব্য করুন