
১৯৭৯-৮০ সালে আবাহনী আর মোহামেডানের খেলায় রেফারি লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। আবাহনীর সালাউদ্দিন, হেলাল আর আনোয়ার এই অপরাধে গ্রেপ্তার হন। ‘মার্শাল ল’ চলছিল। নবম পদাতিক ডিভিশনের দায়িত্ব ছিল ঢাকার শৃঙ্খলা তদারকির। মেজর জেনারেল মন্জুর ছিলেন নবম পদাতিকের জিওসি (জেনারেল অফিসার কমান্ডিং)। জেনারেল এরশাদ দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি এসেই তিন খেলোয়াড়কে মুক্ত করেন। জেনারেল মন্জুর এই তিন খেলোয়াড়কে বন্দি করার কথা নিশ্চিতভাবেই জেনারেল এরশাদকে জানিয়েছিলেন। দেশে ফিরেই তাঁদের মুক্তি দিয়ে জেনারেল এরশাদ জনপ্রিয় হলেন আর আর্মি (রেষারেষি)-তে টেক্কা দিলেন মন্জুরকে। খেলা থেকে সুযোগ নিতে সবাই মুখিয়ে থাকে।
সেই সালাউদ্দিন আজ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি। তাঁর ডান হাত সোহাগ আজ ‘ফিফা’ কর্তৃক ‘চোর’ প্রমাণিত হয়ে ‘সাসপেন্ড’। সোহাগ ফেডারেশনে বসে টাকা ‘নয়ছয়’ করছেন– তা টের পেলেন না কেউ! আফগানিস্তানের এক চোর বাদশাহ আমানউল্লাহর বিছানার চাদর তাঁর ঘুমের মধ্যেই শরীরের নিচ থেকে টেনে বের করে চম্পট দিয়েছিল। সোহাগ দিনের পর দিন ‘জাগনা’ ফেডারেশন কর্তাদের মধ্য থেকে লুটপাট করলেন– সেই কথা, ‘মারি তো গণ্ডার, লুটি তো ভান্ডার’। অথচ কেউ টের পেল না! আশ্চর্য হতেই হয়। এখন কমিটি বসেছে। কিছু ছাড় দেবে না।
একবার এক পালোয়ান একটি ভেজা ‘তোয়ালে’ চিপে ছিটেফোঁটা পানিও না রেখে বলল– কে আছো, এখন এই তোয়ালে থেকে পানি বের করে দেখাও। কেউ সাহস করল না। এক ছিপছিপে ভদ্রলোক এসে তোয়ালেটা নিলেন। তিনি চাপলেন; ফোঁটা ফোঁটা পানি ফ্লোরে টপ টপ করে পড়ল। সবাই হতবাক। ভদ্রলোক বললেন– অবাক হচ্ছেন কেন? আমি ইনকাম ট্যাক্সে চাকরি করি।
দেশের ৫০ বছর পার হলো; ক্রীড়াক্ষেত্রে পাওনা কী? আবারও জেনারেল এরশাদের নাম নিতে হয়। বিকেএসপি তাঁরই ‘ব্রেন চাইল্ড’। আর একটাও বেসরকারি বিকেএসপি হয়নি। আকারে ছোট্ট দেশ; জনসংখ্যা ১৭ কোটি। সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ‘পরিবার পরিকল্পনা’। তবে এই ১৭ কোটি মানুষকে যেহেতু ধাক্কা দিয়ে দেশের বাইরে বের করে দেওয়া সম্ভব না; এদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাগ করে দিতে হবে। সেনাবাহিনী দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে চূড়ান্ত সফল। এদের সব ক্রীড়াবিদ গ্রামের সন্তান। সেনাবাহিনীর ছেলেদের থেকে তাদের কোন খেলাতে কী দক্ষতা আছে, তা নিংড়ে বের করা হয়। বলতে বাধা নেই, সেনাবাহিনীর জেসিও/ এনসিওরা হলেন দেশশ্রেষ্ঠ কোচ।
আমরা দেশীয় কোচদের মূল্যায়ন করি না। সুযোগ পেলেই বিদেশি কোচ আনা হয়; ডলার ওড়ে। ক্রীড়াকর্তারা বলবেন– আজতক বিদেশি কোচ দিয়ে কোন ‘পানিপথ’ যুদ্ধ উদ্ধার করেছেন? দেশের ক্রীড়াবিদ যাঁরা, দেশের কোচ যাঁরা, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা আনুন। তাঁরা আপনাদের হতাশ করবেন না।
মেজর (অব.) শাহাবুদ্দিন চাকলাদার: সাবেক অধিনায়ক, জাতীয় হকি দল
মন্তব্য করুন