আদর্শবান নেতাকে সহযোদ্ধা, কর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা করে। বিপরীতে মাস্তানকে সবাই ভয় এবং ঘৃণা করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল দাবি করেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই তাঁকে ভয় পেত, এখনও পায়।’ বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তাঁর একটি ফোনালাপে এ অশোভন বক্তব্য পাওয়া গেছে। বিতর্ক পিছু না-ছাড়া ছাত্রলীগ সভাপতি রুবেল সেই ফোনালাপে আত্মঘাতী মন্তব্যও করেছেন। নিজের কর্মীকে অন্যদের দিয়ে মার খাওয়ানোর স্বীকারোক্তি উঠে এসেছে সেই ফোনালাপে।

৩২ সেকেন্ডের সেই অডিও রেকর্ডে রুবেলকে বলতে শোনা যায়, ‘...রমজাইন্নারে মারতে হইছে আমার? ...রমজাইন্নারে কোপ পড়ছে না? অনেক লাফাইছে না? লাফাইছে রমজান। ওই হিসাবে পড়ি গেছে। সব কিছু মুখে বলতে হবে কেন?’ ফাঁস হওয়া ফোনালাপের বিষয়ে রুবেলের মন্তব্য জানার চেষ্টা করেও তাঁকে পায়নি সমকাল। একটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি যখন একজন ছাত্রকে জখম করার জন্য কৌশল আঁটেন এবং সেই পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেন, তখন ফৌজদারি অপরাধে তাঁর বিচার হওয়া উচিত। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো পদে থাকার নৈতিক ভিত্তি তাঁর থাকার কথা নয়। বারবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেও কোন খুঁটির জোরে রেজাউল হক রুবেল টিকে আছেন?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের দাপট ছিল। নানা অপকর্মে জড়িয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল তারা। টানা ১৪ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায়। এ সময় শিবিরের সেই ত্রাস না থাকলেও ছাত্রলীগের গ্রুপিংয়ের কারণে সংবাদমাধ্যমে বারবার নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ব্যক্তির অপরাধের দায় সংগঠন নেবে না বলে বুলি আওড়ালেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দুষ্টের দমন করছে না। বরং দিনের পর দিন এসব অপকর্মে প্রশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।

নেতা যখন নিজেই স্বীকার করে– তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই ভয় পায়; তখন বুঝতে হবে, সে ভয়ের কারণ মাস্তানি। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটিগুলো কেন্দ্রীয় নেতাদের কতটুকু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তা চিন্তার বিষয়। কারণ আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতারা ‘মাই ম্যান’দের দিয়ে কমিটি করতে চাপ সৃষ্টি করেন। স্থানীয় রাজনীতিতে এ চর্চা করতে গিয়ে তাঁরা নেপথ্যে থেকে ছাত্রলীগের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করান।    

সমকালে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী, আরেকটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দুটি পক্ষ আবার ১১টি উপদলে বিভক্ত। সভাপতি রেজাউল হক ও তাঁর গ্রুপ সিএফসি মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। যতদিন পর্যন্ত এসব গ্রুপিং বন্ধ হয়ে আদর্শভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন রুবেলদের অপকর্ম বন্ধ হবে না। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর দায় ছাত্রলীগ এড়াতে পারে না। এমনটি আর চলতেও দেওয়া যায় না। অভ্যন্তরীণ কোন্দল বন্ধে ভূমিকা রেখে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নিজেদের প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ ফুটিয়ে তোলার সুযোগ নিতে পারে।

মিজান শাজাহান : সহসম্পাদক, সমকাল
mizanshajahan@gmail.com