আসন্ন চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে– শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুসারে  আচরণবিধি লঙ্ঘনের যে ‘হিড়িক’ পড়িয়াছে, উহা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নহে; বরং বলা যায়, এই ধারা অব্যাহত থাকিলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্য, এমনকি সদিচ্ছা লইয়াই প্রশ্ন উঠিতে পারে। প্রতিবেদনমতে, প্রতিটা সিটি করপোরেশন এলাকাতে প্রার্থীরা আচরণবিধি উপেক্ষা করিয়া যখন-তখন শোডাউন করিতেছেন। মাঝেমধ্যে রাস্তা বন্ধ করিয়া পথসভাও করিতে দেখা যাইতেছে তাঁহাদের। আচরণবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইয়া অনেকে লেমিনেটিং পোস্টার সাঁটাইয়াছেন।

অধিকতর গুরুতর হইল, সিলেটে সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে কয়েক দফা ভোট চাহিয়াছেন। বরিশালে সরকারি জমির উপর করা হইয়াছে শাসকদলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস। তথায় বিরোধীদলীয় এক প্রার্থীর প্রচারে পুলিশের বাধা দিবারও অভিযোগ উঠিয়াছে। অধিকন্তু কেবল খুলনাতেই আচরণবিধি ভঙ্গ করিবার দায়ে গত সপ্ত দিবসে ১৯ জন প্রার্থীকে অর্থদণ্ড করা হইয়াছে। অন্যত্র নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো তৎপরতা অন্তত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয় নাই। আচরণবিধির যথাযথ প্রয়োগ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এহেন গা-ছাড়া ভাব এমন সময়ে পরিলক্ষিত হইতছে, যখন খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার- সিইসি যে কোনো প্রকার অনিয়মে প্রয়োজনে ভোট বন্ধ করিবার হুমকি পর্যন্ত দিতেছেন।

অনস্বীকার্য, বর্তমান কমিশনের অধীনে অদ্যাবধি অনুষ্ঠিত অধিকাংশ নির্বাচনই বড় কোনো বিতর্কের জন্ম দেয় নাই। সিটি করপোরেশন নির্বাচনসমূহ প্রায় সকল মহল হইতে বেশ প্রশংসিত হইয়াছে।  গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে– বিশেষত অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানের প্রশ্নে একটি আদর্শ নির্বাচন বলিলেও ভুল হয় না। আমরা মনে করি, দায়িত্ব গ্রহণকালে বর্তমান ইসি পূর্বসূরিদের বিতর্কিত ধারা হইতে বাহির হইবার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করিয়াছিল; উহা রক্ষা করিবার জন্য ভবিষ্যতের প্রতিটা নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করিবার কোনো বিকল্প নাই। অধিকন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরিয়া দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবিরে বর্তমানে যে যুদ্ধংদেহি মনোভাব পরিলিক্ষিত হইতেছে, উহাও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও আন্তরিকতা প্রমাণের মধ্য দিয়া অনেকাংশেই স্তিমিত করা যায়।

মনে রাখিতে হইবে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে– স্থানীয় সরকার নির্বাচন হইলেও এই চার সিটি নির্বাচনই সবচাইতে বড় নির্বাচন। এই কারণে অনেকেই উক্ত নির্বাচনসমূহকে আগামী বৎসরের সূচনায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সাল রূপে বর্ণনা করিতেছেন। অর্থাৎ এই নির্বাচনসমূহের পরিবেশ-পরিস্থিতিই নির্দেশ করিতে পারে– আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রত্যাশিত মাত্রায় স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হইবে কিনা।

আমাদের প্রত্যাশা, নির্বাচন কমিশন এই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইবে এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথ দেখাইবে।