দীর্ঘসূত্রতা কেবল বিচারপ্রার্থী নহে, বিবাদীর জীবনও যে তছনছ করিয়া দিতে পারে– উহারই নজির তুলিয়া ধরিয়াছে বগুড়ার আবদুল করিম দুলালের ঘটনাটা। শনিবার সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ৫৫ বৎসর বয়সী দরিদ্র লোকটিকে একটা সামান্য মামলায় তিন দশকেরও অধিক সময় ধরিয়া আদালতের বারান্দায় দৌড়ঝাঁপ করিতে হইতেছে। এতদসত্ত্বেও তিনি অবহিত নন, এই মামলার নিষ্পত্তি হইতে আর কতদিন লাগিবে।

প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, রাজধানীর মহাখালীতে একটা জুতার কারখানায় চাকুরি করাকালে দুলাল যেই মেসে থাকিতেন, তথা হইতে তাঁহার দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের রাখিয়া যাওয়া ব্যাগ তল্লাশি করিয়া ১৯৯৩ সালে সিআইডি পুলিশ তিনটি মূল্যবান মূর্তি উদ্ধার করে। স্বাভাবিকভাবেই আত্মীয় দুদুর সহিত গ্রেপ্তার হন দুলাল। মামলা হয় দুইজনের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে জুতার কারখানার চাকুরি তো গিয়াছেই; ঢাকা ত্যাগ করিয়া পত্নী, পুত্র ও কন্যা লইয়া দুলালকে থিতু হইতে হইয়াছে বগুড়ায়। বর্তমানে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী হিসাবে কর্মরত দুলালের যথায় সংসার চালানোই কঠিন তথায় দেড়-দুই মাস অন্তর মামলায় হাজিরা দিতে তাঁহাকে বগুড়া হইতে ঢাকায় আসিতে হয়।

আশ্চর্যজনক হইলেও সত্য, ২৫ বৎসরে মামলার কোনো সাক্ষী হাজির করিতে পারে নাই পুলিশ। মামলায় বাদীর হালনাগাদ কোনো তথ্য নাই। তিনিসহ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাক্ষীরা আদৌ বাঁচিয়া আছেন কিনা, উহাও অজানা। এতদসত্ত্বেও যেই মামলার সর্বোচ্চ সাজা তিন মাসের কারাদণ্ড, সেই মামলা এত বৎসর ধরিয়া চলিয়া আসিতেছে! এই পরিস্থিতিকেই হয়তো কবিগুরু বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদিবার সহিত তুলনা করিয়াছিলেন।

নিছক বিচারক সংকট নহে, বিচারব্যবস্থায় সংবেদনশীলতার ঘাটতিও যেই দেশে বিচারের দীর্ঘসূত্রতার জন্য দায়ী, উক্ত ঘটনা তাহাই বলিতেছে। রাতারাতি হয়তো এই প্রকার দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটানো যাইবে না, স্বীকার করিতে হইবে। কিন্তু আলোচ্য মামলার অনুরূপ মামলাসমূহকে শুনানিতে অগ্রাধিকার দিলে দুলালের ন্যায় বহু অসহায় লোক যে বাঁচিয়া যাইবে, উহাতে সন্দেহ নাই।