দেশে মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসির সাম্প্রতিক নির্দেশনা গ্রাহকবান্ধব নহে বলিয়া খাত-সংশ্লিষ্টদের ন্যায় আমরাও মনে করি। কারণ, নির্দেশনাটির বাস্তবায়ন বিশেষত প্রান্তিক পর্যায়ের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল যোগাযোগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মাধ্যমটি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করিতে পারে। ফলস্বরূপ জনগণের মধ্যে ইতোমধ্যে সৃষ্ট ডিজিটাল বৈষম্য আরও প্রকট হইতে পারে।

উল্লেখ্য, রবিবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিটিআরসি গত ৩ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোন অপারেটরদের এই নির্দেশনা দিয়াছে– আগামী ১৫ অক্টোবর হইতে ৭ দিন, ৩০ দিন এবং আনলিমিটেড ব্যতীত সকল ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ করিয়া দিতে হইবে। ইহার ফলে ৩ দিন ও ১৫ দিনের ন্যায় স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজসমূহ বন্ধ হইয়া যাইবে; অথচ মোবাইল অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১২ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহকের ৬৯ শতাংশই ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ৩ দিনের প্যাকেজ ক্রয় করেন। প্রবাসী আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বা অন্য কোনো সাময়িক প্রয়োজনে তাহারা এই প্যাকেজ ব্যবহার করেন।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী যথার্থই বলিয়াছেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের অতিরিক্ত ইন্টারনেট প্যাকেজ সংখ্যা গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে। তবে ইহার জন্য জনপ্রিয় প্যাকেজ বন্ধ করা কোনো কাজের কথা নহে। যেই জরিপের ভিত্তিতে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি এত বড় সিদ্ধান্ত লইয়াছে, তাহাতেও প্রশ্ন বিদ্যমান। অভিযোগ, জরিপে প্রধানত শহুরে ও শিক্ষিত অংশের গ্রাহকদের প্রাধান্য দিবার কারণেই মাত্র প্রায় ১৭ শতাংশ (৭ দিনের) এবং ১০ শতাংশ (৩০ দিনের) গ্রাহকের পছন্দের প্যাকেজ চালুর সিদ্ধান্ত আসিয়াছে।

বাস্তবতা হইল, প্যাকেজের সংখ্যা নহে; মোবাইল ফোন ইন্টারনেট গ্রাহকদের প্রধান ভাবনা একটা প্যাকেজের প্রতিশ্রুত সেবার মান লইয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো বটেই; মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও এমন অভিযোগ বিস্তর– অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহক প্রতিশ্রুত প্যাকেজ ভলিউম পান না; মেয়াদ শেষে অবশিষ্ট ভলিউম পরবর্তী প্যাকেজের সঙ্গে যোগ না হওয়ায় গ্রাহক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।

তাই আমাদের প্রত্যাশা, স্বল্পমেয়াদি ও জনপ্রিয় প্যাকেজসমূহ বন্ধের পরিবর্তে বিটিআরসি বরং উল্লিখিত অভিযোগসমূহ সুরাহায় দ্রুত মনোনিবেশ করিবে।