শেষ অবধি ডিমের আমদানি লবিই জয়যুক্ত হইল বলিয়া মনে হইতেছে। সোমবার সমকাল অনলাইনের খবর অনুযায়ী, সরকার ‘বাজারে স্থিতিশীলতা আনিতে’ আপাতত চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি প্রদান করিয়াছে।

রবিবার সচিবালয়ে স্বীয় দপ্তরে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণাকালে বাণিজ্য সচিব বলেন, দেশে ডিমের চাহিদা দৈনিক চার কোটি। চারটি কোম্পানিকে এই সংখ্যক ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হইয়াছে; পরিস্থিতি দেখিয়া ভবিষ্যতে আরও ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হইতে পারে। গত কয়েক মাস যাবৎ অন্যান্য নিত্যপণ্যের ন্যায় ডিমের বাজারেও চরম অস্থিরতা চলিতেছে।

বিষয়টা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে– সরকারের শীর্ষ মহলকেও বেশ বিব্রত করে। এই প্রেক্ষাপটে গত মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সহিত সভা করিয়া উৎপাদন ব্যয় সাড়ে ১০ টাকা ধরিয়া খুচরা পর্যায়ে প্রতিটা ডিম ১২ টাকা বিক্রয়ের নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু দেশের কোনো অঞ্চলেই উহা মান্যতা পায় নাই। এই পরিস্থিতিতেই বাণিজ্য সচিবের মতে, সরকার ডিম আমদানির পথ ধরিয়াছে।

আমরা প্রাণিসম্পদমন্ত্রীকে বরাবরই ডিম আমদানির বিরোধিতা করিতে দেখিয়াছি। বাণিজ্যমন্ত্রীও বিষয়টা লইয়া এতদিন অন্তত দৃশ্যত দোলাচলে ছিলেন। তবে সুযোগসন্ধানী ডিম আমদানিকারকরা বরাবরই তৎপর; উহা সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রীও প্রকাশ্যে বলিয়াছেন। এমন সন্দেহ কি অমূলক যে, বিদ্যমান ডিম সংকটের পশ্চাতে এই আমদানিকারকদের হাত থাকিতে পারে? ডিমের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিন্তু বহুবার বর্তমান সংকটের জন্য কতিপয় করপোরেট কোম্পানির দিকে আঙ্গুল তুলিয়াছিলেন, যাহারা নিছক পুঁজির দাপট খাটাইয়া দীর্ঘদিন ধরিয়া খাতটি নিয়ন্ত্রণ করিয়া আসিতেছে। আর এই দেশে তো এমন ব্যবসায়ীর অভাব নাই, যাহারা গাছেরটা তো খানই, তলারটাও খাওয়ার সুযোগ সন্ধান করেন। আমাদের শঙ্কা, এ সন্দেহ সত্য হইলে আমদানির পরও বাজার শীঘ্রই স্থিতিশীল হইবার সম্ভাবনা কম। কারণ তাহাদের মুনাফালিপ্সা এত অল্পে তুষ্ট হইবার নহে। পেঁয়াজের বাজার কিন্তু প্রায় একই কারণে প্রচুর আমদানির অনুমতি দিবার পরও স্থিতিশীল হয় নাই।

অধিকতর উদ্বেগজনক, এমনিতেই মুরগির ডিম, বাচ্চা ও খাদ্যের বাজারে করপোরেট একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের বৃহৎ অংশ পথে বসিয়াছে; বাকি খামারিরাও আলোচ্য সিদ্ধান্তের কারণে বিপদে পড়িতে পারে। পরিণামে চিনির ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে যাহা ঘটিয়াছে, একদিন পোলট্রি পণ্যের জন্যও দেশ সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর হইয়া পড়িলে উহাতে বিস্ময়ের কিছু থাকিবে না।

আমরা মনে করি, ডিমের বর্তমান সংকটের জন্য প্রায় সকলেই সরাসরি সিন্ডিকেটকে দায়ী করিতেছেন। আমরাও এই স্তম্ভে একাধিকবার বিষয়টির অবতারণা করিয়াছি। সেই সিন্ডিকেট ভাঙিবার দৃঢ় পদক্ষেপ না লইয়া খামারিদের উপর আমদানির খড়্গ ঝুলাইলে সমস্যার কার্যকর সমাধান আসিবে না। সাধারণের পুষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বরং বাজার ব্যবস্থার ত্রুটি সংশোধন এবং শক্ত ও ধারাবাহিক বাজার তদারকি নিশ্চিতে কঠোর হউক।