- মতামত
- বন্ধ হোক শিশুর সলিল সমাধি
বন্ধ হোক শিশুর সলিল সমাধি

প্রতীকী ছবি।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পুরো দেশজুড়েই জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নদী। এ ছাড়া শহর-গ্রামে খাল, বিল, ডোবা, নালা ও পুকুরসহ অসংখ্য জলাশয় রয়েছে। বছরের সব সময় পানি থাকে এমন অনেক জলাশয় রয়েছে দেশে। বর্ষাকালে সাধারণত বন্যা বা বৃষ্টির পানিতে এসব জলাশয় পরিপূর্ণ ও প্লাবিত হয়ে থাকে। দেশে প্রতি বছর বিভিন্ন জলাশয়ের পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
বর্ষাকালে সব জলাশয় পানিপূর্ণ থাকায় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। শিশু খেলার ছলে না বুঝেই জলাশয়ের পানিতে গেলে মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। অনেক সময় পানি থেকে তুলতে পারলেও, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু ঘটে এসব শিশুর। একাধিক শিশু একসঙ্গে ডুবে মারা গেছে এমন ঘটনাও কম নয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাচ্চা দুই-এক দিন
নিখোঁজ থাকে, পরিবারের মানুষ অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পান না
আদরের সন্তানকে। পরে জলাশয়ে ভেসে ওঠে তার লাশ। বিভিন্ন
সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ১৮ হাজার শিশু পানিতে ডুবে
মারা যায়। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে প্রাণ যায় ৪৯ জন শিশুর। অর্থাৎ প্রতি ৩০ মিনিটে
একজনের মৃত্যু। এক থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ এটি।
ইউনিসেফসহ আরও অনেক
সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রতি বছর শিশুদের
সাঁতার শেখানো কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে। তাতেও রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা।
সুইমিংপুলের অভাবে পুকুরে ও পলিথিনের কৃত্রিম জলাশয়ে পরিচালনা করতে হয় কার্যক্রম।
আবার কর্মসূচিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। যাদের
পরিবারের কোনো সদস্যের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে, শুধু
তারাই এসব কর্মসূচির গুরুত্ব বেশি অনুধাবন করতে পারেন।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সামাজিক সচেতনতা আরও
বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সাঁতার প্রশিক্ষণ কর্মসূচির
প্রসার কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু কোথায়, কখন থাকছে তা
বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্ষার সময় বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বসতবাড়ির আশপাশের
জলাশয় বাঁশ, কাঁটাতার বা নেট দিয়ে ঘিরে রাখা যেতে পারে। শিশু
সাঁতার শেখার উপযুক্ত হলে তাকে দ্রুত সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
একটি শিশুরও যেন আর পানিতে ডুবে অপমৃত্যু না ঘটে। এ ঘটনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি
এবং সাঁতার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সরকারি উদ্যোগে আরও ব্যাপকভাবে পরিচালনা করা হোক–
এই প্রত্যাশায় দেশের সব সচেতন নাগরিক।
নুরুল্লাহ কামিল: সমাজকর্মী
মন্তব্য করুন