
ইংরেজ কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ বলেছেন, ‘শিশুরাই জাতির পিতা।’ শিশু পৃথিবীতে নবাগত। চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে অসীম কৌতূহল তার। মহাসমুদ্রের নাবিকরা যেমন ধ্রুবতারাকে লক্ষ্য করে বিশাল সমুদ্রে পাড়ি জমায়, শিশুর শৈশবে মা-বাবা হলো তেমন ধ্রুবতারা। অতি শৈশব থেকে মা-বাবার নিবিড় সান্নিধ্য শিশুটির জীবনব্যাপী দিকনির্দেশনার নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়োজন সাধনা, একনিষ্ঠ শ্রম, সঠিক দিকনির্দেশনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ। জীবনের চলার পথে চাই নির্দিষ্ট এবং সুপরিকল্পিত পথরেখা। সেই পথরেখাই সফলতার দুয়ারে উপনীত করবে। সে জন্য সূচনা পর্বেই লক্ষ্য স্থির করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি পর্বে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। পরিবারের ক্ষুদ্রতম গণ্ডিতে একজন অপরিণত অবোধ শিশু আয়ত্ত করে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বোধ, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য, এমনকি জীবন গড়ার নিশানা। একটি শিশুর জীবনকে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে গড়ে তুলতে তথা জীবনমুখী ও বাস্তববাদী হতে বাবা-মায়ের ভূমিকা বর্ণনাতীত।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ৫৫ শতাংশ শিশু খেলা বা নানা শিক্ষণীয় কাজে বাবা-মায়ের সঙ্গ পায় না। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকর বিকাশ, ভালোবাসা, খেলাধুলা, নিরাপত্তা এবং পুষ্টিকর খাবারের যথাযথ পরিচর্যাহীনতায় শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। ফলে শিশু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না।
আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান শিশুদের স্বাস্থ্যশিক্ষা গ্রহণ, মানসিক চাপ মোকাবিলার ক্ষমতা তৈরি এবং উন্নত ভবিষ্যৎ অর্জনে বাবা-মায়ের সহায়ক ভূমিকাকে খুব গুরুত্ব দেয়। এতে তার ভবিষ্যতের গাঁথুনি মজবুত হয়। সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে ওঠে। তারা যখন শৈশবকাল যত্ন ও উদ্দীপনাময় পরিবেশে কাটায়, তাদের মস্তিষ্কে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে নতুন স্নায়ু-সংযোগ ঘটে।
গবেষকরা এও বলেছেন, সহিংস পরিবেশ; যত্ন ও উদ্দীপনার অভাবে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তারা তখন বিপথে ধাবিত হয়। নানা দিক বিবেচনায় শিশুর লক্ষ্য নির্ধারণে বাবা-মায়ের ভূমিকা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর অস্তিত্বের সবটুকুই আবেগ দিয়ে মোড়া। এই আবেগ ক্রমে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রভাবিত হয়। শিশুর সব রকম আচরণ-অনুভূতি প্রকাশ সম্পর্কে শারীরিক-মানসিক বিকাশ ভাবনায় বাবা-মা অধিক সজাগ হলে শিশুর সুন্দর ভবিষ্যতের পথ মসৃণ হবে। তারা মানবিক মানুষ হওয়ার দিশা পাবে। দেশ ও দশের জন্য আশীর্বাদ হবে। তাই বাবা-মায়ের উচিত শিশুর প্রতি যত্নশীল গভীর উপলব্ধি ও প্রজ্ঞা দিয়ে তার ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সহযোগিতা করা। মানবসমাজকে সুস্থ, সুন্দর ও কলুষমুক্ত রাখার জন্য শিশুর প্রতি সদয় অনুভূতিপূর্ণ ব্যবহার করা জরুরি। শিশুর সার্বিক বিকাশে বাবা-মায়ের সঠিক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ মানবসম্পদ, মানসিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি গঠনে বাবা-মায়ের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
মোশারফ হোসেন: প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান, সরকারি ইস্পাহানী ডিগ্রি কলেজ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা
mamun86cu@gmail.com
মন্তব্য করুন