ঢাকা রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

বাল্যবিবাহের গোড়ায় হাত দিন

বাল্যবিবাহের গোড়ায় হাত দিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

প্রবাদের কাজির গরু নাকি গোয়ালে না থাকিয়া কিতাবে ছিল। বাস্তবেও যে উহা বিরল নহে, বুধবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন হইতে জানা গেল। প্রতিবেদনমতে, ২০১৮ সালে ময়মনসিংহের সহিত পার্শ্ববর্তী শেরপুরকেও সরকারিভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার জেলার সদর থানায় এক অনুষ্ঠানে জেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলিয়াছেন, গত বৎসর জেলায় চার সহস্রাধিক বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হইয়াছে।

এমনকি অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মতে, শেরপুরে এক বৎসরে বাল্যবিবাহ ছয় সহস্রের কম নহে; যাহা শহর ও গ্রাম মিলাইয়া বৎসরে ৮০ শতাংশের অধিক। মাত্র পাঁচ বৎসর পূর্বে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষিত একটা জেলায় এহেন নারী প্রগতির পথে কণ্টকস্বরূপ ঘটনার এত বাড়বাড়ন্ত কেন? তবে কি ঘোষণাতেই গলদ বা অর্জিত ‘সাফল্য’ টেকসই করিবার কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি ছিল?

এই বৎসর ৩ মে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ৫১ শতাংশ তরুণীর শৈশবে বিবাহ হইবার কথা উল্লেখ করা হইয়াছিল, যাহা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও সামাজিক-সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপদতার কারণে এই ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য বরাবরই ছিল অধরা। ২০২০ হইতে দুই বৎসরের করোনা অতিমারি ওই অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়াছে। তখন বিশেষত আর্থিক অনটনের কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলির কিশোরীদের লেখাপড়া বন্ধ হইয়া যায়। তৎসহিত পাল্লা দিয়া বৃদ্ধি পায় বাল্যবিবাহ।

অস্বীকার করা যাইবে না, গ্রাম ও শহরের ওই অসহায় পরিবারগুলির এহেন সংকট অদ্যাবধি কাটে নাই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে অধিকতর গভীর হইয়াছে। অন্যদিকে পরিস্থিতির দাবি উপেক্ষা করিয়া সরকার কিন্তু বাল্যবিবাহ বিষয়ে অনেকাংশেই গতানুগতিক প্রচারধর্মী কাজেই আটকা রহিয়াছে। ফলে শুধু শেরপুর কেন; বাল্যবিবাহের মহামারি আরও বহু জেলাতে আছে বলিয়া আমাদের ধারণা।

বাল্যবিবাহ নারীর কতটুকু শারীরিক-মানসিক ক্ষতি করে কিংবা সমাজ এমনকি অর্থনীতিকেও কীভাবে পশ্চাতে টানিয়া ধরে, শুধু ইহা বোঝাইলেই চলিবে না; এই বিপদ প্রতিহতকরণে বিদ্যমান আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট পরিবারসমূহের পাশে সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা লইয়া দাঁড়াইতে হইবে।

আরও পড়ুন