অন্যদৃষ্টি
ক্যাম্পাসে খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান

মুহাম্মদ ইয়াসীন ইবনে মাসুদ
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
আমাদের দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থীর বড় অংশটি আসে নিম্ন-মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত অথবা একেবারেই দরিদ্র পরিবার থেকে। সংগত কারণেই এসব শিক্ষার্থী জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে পরিবার থেকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা পায় না। ফলে এর বেশির ভাগকেই অর্থ সংগ্রহে সংগ্রাম করতে হয় প্রতিনিয়ত। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো কম ব্যয়ে কিছু শিক্ষার্থীর আবাসন সমস্যা দূর করতে পারলেও শিক্ষার্থীর বড় অংশ এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। অন্যদিকে কলেজে এ সুযোগ খুবই কম বা অনেক কলেজে একেবারেই অনুপস্থিত। ফলে অনেক শিক্ষার্থীকে কোনো রকমে একবেলা বা দু’বেলা খেয়ে এবং কম ভাড়ার বসবাসের অযোগ্য মেসে থেকে শিক্ষাজীবন কাটাতে হয়।
অন্যদিকে সমাজে মুখ রক্ষার জন্য বেসরকারি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও কঠিন। তারা না পারে খরচ মেটাতে, না পারে ছেড়ে চলে যেতে। অনেক সময় অভিভাবকদের দিয়ে স্থায়ী সম্পত্তি বিক্রি করিয়ে টিউশন ফি এবং চলার ব্যয় নির্বাহে অর্থ সংস্থান করতে হয়।
বিদেশের মতো এসব শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে একাধারে দুটি সুফল নিশ্চিত হবে– আয়ের পথ তৈরি এবং বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতার সুযোগ। দরিদ্র শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কাজ করে যেমন খরচ চালাতে পারবেন, তেমনি এ কাজের অভিজ্ঞতার সনদ তাদের পড়ালেখা শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতেও সহায়তা করবে। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনুসরণে ক্যাম্পাসে কো-অপারেটিভ শপ চালু করা গেলে সেগুলোতে বিনিয়োগ ও কাজ করে শিক্ষার্থীরা যে অভিজ্ঞতা পাবে তা হলো: হিসাবরক্ষণ ও হিসাব ব্যবস্থাপনা, ক্রেতা ব্যবস্থাপনা, সাপ্লাই চেইন এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা। এসব কাজে যুক্ত থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ দক্ষতাও বাড়বে। এ ছাড়া বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা যে কোনো প্রকার কাজকে সম্মান দেওয়া শিখবে। এটি তাদের দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হয়ে উঠতে সহায়তা করবে।
এ কাজের অভিজ্ঞতাকে অনেকের ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার হতে পারে। অনেকে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী জীবনে উদ্যোক্তা হয়ে স্বকর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর নজির ভূরি ভূরি।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের বিস্তৃত ক্যাম্পাসগুলোর কোনো বিশেষ জায়গায় সপ্তাহে দুই বা তিন দিন শিক্ষার্থীদের সংগ্রহে থাকা অথবা তাদের নিজেদের তৈরি বিভিন্ন জিনিস প্রদর্শনী ও বিক্রির ব্যবস্থা করে দিলেও তার আয় থেকে অনেকে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে পারবে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে আয়-উপার্জনের ব্যবস্থা হলে প্রাইভেট টিউশনির জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে যাতায়াতের অতিরিক্ত সময়ও বাঁচবে। ফলে পড়ালেখার সময় বেশি পাওয়ার জন্য ফলও ভালো হবে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, বিভাগ, শাখা ও পাঠাগারের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করার জন্য খণ্ডকালীন ভিত্তিতে ঘণ্টা হারে শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এতে সংশ্লিষ্ট কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ব্যয় সাশ্রয়ের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবে। কারণ স্থায়ী কর্মচারী নিয়োগের বদলে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী নিয়োগ দিলে মাসিক স্থায়ী ব্যয় কমানো সম্ভব হবে। এতে অলস সময়ের জন্য মজুরি পরিশোধের চাপ কমবে।
তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ সফল করতে হলে এর পুরো প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। অন্যথায় এখানে কাজ করা নিয়ে রাজনৈতিক কলহ-কোন্দল সৃষ্টি হয়ে সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে।
মুহাম্মদ ইয়াসীন ইবনে মাসুদ: শিক্ষক, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, জামালপুর
- বিষয় :
- অন্যদৃষ্টি
- মুহাম্মদ ইয়াসীন ইবনে মাসুদ