ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

অন্যদৃষ্টি

কাহলিল জিবরানের ‘দ্য প্রফেট’

কাহলিল জিবরানের ‘দ্য প্রফেট’

শহিদুল শ্যানন

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

কবি কাহলিল জিবরানকে প্রথম দিকে লোকে কলাকৈবল্যবাদী হিসেবে চিনলেও তুরস্কের বিরুদ্ধে সিরিয়ার যুদ্ধজয়ের পর তাঁর কবিসত্তার দার্শনিক ও রাজনৈতিক দিকগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। ‘দ্য প্রফেট’ গ্রন্থে তাঁর দর্শন, রাজনীতি, কাব্য ও আধ্যাত্মিকতা যেভাবে ধরা পড়েছে, সেটা আর কোনো গ্রন্থে পড়েনি।

১৮৮৩ সালের ৬ জানুয়ারি লেবাননের বিশারি শহরে জন্মগ্রহণ করেন কাহলিল জিবরান। তখন সিরিয়া ও লেবানন অভিন্ন রাষ্ট্র ছিল। ১২ বছর বয়সে মা, এক ভাই ও ছোট দুই বোনের সঙ্গে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে চলে যান এবং বোস্টন শহরে বসবাস করতে শুরু করেন। বোস্টনে পৌঁছার কিছুদিন পর দুই বছরের জন্য পড়াশোনা করতে একবার এবং ১৯০২ সালে আরেকবার অল্পদিনের জন্য লেবাননে বেড়াতে যান তিনি। এরপর লেবাননের সঙ্গে আর তাঁর দেখা হয়নি।

স্কুলে থাকতেই শুরু হয় জিবরানের সাহিত্যচর্চা আর ছবি আঁকা। ২২ বছর বয়সে বোস্টনের তৎকালীন নামকরা চিত্রগ্রাহক ফ্রেড হল্যান্ড ডে তাঁর চিত্রকর্মের প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। এর পরপরই কেমব্রিজ স্কুলে আরেকটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন সেখানকার প্রধান শিক্ষিকা মেরি হ্যাসকেল। এরপর দুই বছরের জন্য তিনি প্যারিসে যান, চিত্রকর্মে পড়াশোনা করতে। প্যারিস থেকে বোস্টনে ফিরে মেরি হ্যাসকেলকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। মেরি সেই প্রস্তাবে রাজি না হলেও তিনিই হয়ে ওঠেন জিবরানের পরম বন্ধু এবং পৃষ্ঠপোষক।

১৯১৮ সালে সরাসরি ইংরেজিতে লেখা তাঁর প্রথম বই ‘দ্য ম্যাডম্যান’ প্রকাশিত হয়। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয় ইংরেজিতে লেখা তাঁর তৃতীয় বই ‘দ্য প্রফেট’। বাংলাসহ এ যাবৎ শতাধিক ভাষায় অনূদিত এই গ্রন্থকে তিনি নিজেই অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ মনে করতেন।

১৯১৯ সালের ৯ নভেম্বর লেখা (মে জিয়াদাহকে লেখা) এক চিঠিতে তিনি বলেন: ‘বইটি বোধহয় মনে মনে লিখেছিলাম আরও হাজার বছর আগে, অথচ কাগজে কলম দিয়ে লিখলাম ইদানীং। এর মধ্য দিয়ে আমার পুনর্জন্ম হলো। মনে হচ্ছে বেঁচে থাকাটা অর্থবহ। তাঁকে নিয়ে কী লিখব! তিনিই আমাকে লিখলেন। তাঁকে গড়ার আগে তিনিই আমাকে গড়লেন। তারপর এমনভাবে আমাকে চালাতে লাগলেন যেন আমি লিখি।’

ধারণা করা হয়, জিবরান ‘দ্য প্রফেট’ লিখতে শুরু করেন ১৯১২ সালের জুনে এবং কাজটি শেষ করতে তাঁর সময় লাগে এগারো বছর, যদিও এর মধ্যে অন্যান্য লেখা চালিয়ে যান তিনি। মেরি বইটি সম্পাদনার কাজে যুক্ত ছিলেন শুরু থেকেই এবং জিবরান ইংরেজিভাষী হিসেবে তাঁর পরামর্শের গুরুত্ব দিতেন। জিবরানের আঁকা ছবিসহ সম্পাদিত বইটি প্রকাশের (১৯২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর) পর মেরি জিবরানকে এক চিঠিতে (১৯২৩ সালের ২ অক্টোবর) লেখেন: প্রিয় কাহলিল, ‘দ্য প্রফেট’ প্রকাশিত হয়েছে। এটা আমার কল্পনার চেয়েও ভালো... ফরম্যাট দারুণ, তোমার আঁকা ছবি দেখে আমার হৃদয় নেচে উঠেছে। আমি মুগ্ধ। মোটের ওপর দারুণ একটা কাজ... ইংরেজি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ এটি... সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভালোবাসার বই ‘দ্য প্রফেট’। এবং এটি সম্ভব হয়েছে তুমি এটি লিখেছো বলে, কারণ তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমিক।

১৯৩১ সালের ১০ এপ্রিল মাত্র ৪৮ বছর বয়সে লিভার সিরোসিসে জিবরানের মৃত্যু হয়। তাঁর মরদেহ লেবাননের বিশারিতে সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর দুই বছর পর ১৯৩৩ সালে তাঁর ভক্ত প্রকাশক বারবারা ইয়ং প্রকাশ করেন ‘দ্য প্রফেট’-এর দ্বিতীয় পর্ব ‘দ্য গার্ডেন অব দ্য প্রফেট’।

অনেকের মতে, তাঁর এ দুটি কাজই আধ্যাত্মিক ভাবধারার। অনেকে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, এগুলো বিশেষ ধরনের সাহিত্য। অনেকেই হয়তো বলবেন, এগুলো মরমি কবিতামালা। আর মরমি কাব্যও যে শেষ পর্যন্ত বুদ্ধিবৃত্তিক চলন বা দর্শন এবং বিশেষ রাজনীতি, সে কথা অস্বীকার করি কী করে!

২০২৩ সাল কাহলিল জিবরানের বিখ্যাত সৃষ্টি ‘দ্য প্রফেট’ প্রকাশের একশ বছর পূর্তিকাল। মহান এই কবির প্রতি সশ্রদ্ধ ভালোবাসা।

শহিদুল শ্যানন : লেখক, অনুবাদক shaque.khan@gmail.com

আরও পড়ুন