ঢাকা রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

রক্ষক কেন ভক্ষক?

রক্ষক কেন ভক্ষক?

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

রাজধানীতে দুই পুলিশ সদস্য কর্তৃক ২০ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা আবারও রক্ষকের ভক্ষক হইবার অশুভ নজির স্থাপন করিল।

শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, বৃহস্পতিবার পল্টনে এক ব্যাংকে বেসরকারি কোম্পানির এক কর্মী ২০ লক্ষাধিক টাকা জমা দিতে গেলে আরও তিনজনের সহায়তায় ঐ দুই পুলিশ সদস্য টাকাগুলি ছিনাইয়া নেয়। যদিও পুলিশ বেশ দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করিয়াছে, ইহাতে সন্তোষ প্রকাশের অবকাশ নাই বলিয়া আমরা মনে করি। পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ নানা ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ ইহাই প্রথম নহে।

গত বছর এ প্রকারের অন্তত অর্ধ ডজন ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসে, যেগুলির মধ্যে পুলিশ সদস্যদের দ্বারা ২৯ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরের বাহিরে দুবাইফেরত এক যাত্রীর ২২ লক্ষ টাকার স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা এবং ১২ অক্টোবর মতিঝিলে ১৫ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলিয়াছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা কতটুকু ন্যায়বিচার পাইয়াছে, অদ্যাবধি উহা জানা যায় নাই।

  গত বছরের ২৬ অক্টোবর প্রকাশিত একটি বিদেশি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, পুলিশ সদরদপ্তরে ২০১৮ সালে ১৪ সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় এবং সংখ্যাটা ২০২১ সালে ১৬ সহস্র ছাড়াইয়া যায়। তবে, ওই প্রতিবেদন মতে, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের খুব কমই চাকুরিচ্যুতির ন্যায় শাস্তি পায়, অধিকাংশেরই শাস্তি ছিল বদলি ও ভর্ৎসনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। অনস্বীকার্য, অপরাধপ্রবণ পুলিশ সদস্যদের জন্য গুরু পাপেও এহেন লঘু শাস্তি একপ্রকার দায়মুক্তি, যাহা যে কোনো অপরাধীকে প্রণোদনা জোগায়।

পুলিশের কর্তব্যক্তিদের উপলব্ধি করিতে হইবে যে, এহেন দায়মুক্তি জনগণের মধ্যে বাহিনীটি সম্পর্কে আস্থাহীনতা সৃষ্টি করিতে পারে, যাহার নেতিবাচক প্রভাবে সাধারণ অপরাধীদের মধ্যেও পুলিশের ছদ্মবেশ ব্যবহারের ঝোঁক বাড়িতে পারে এবং অপরাধের প্রতিকার প্রশ্নে ভুক্তভোগীদের মধ্যে পুলিশের দ্বারস্থ না হইয়া আইন স্বীয় হস্তে নিবার প্রবণতা বৃদ্ধি পাইতে পারে।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ একটা রাষ্ট্রের জন্য যাহা আদৌ কাম্য হইতে পারে না। অতএব আলোচ্য ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করিতে হইবে।

আরও পড়ুন