‘ফুটো’ ড্যাপ লইয়া কী করিব?

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ‘ড্যাপ’ লইয়া এক যুগ ধরিয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে মূলত বসবাসযোগ্যতায় ছাড় দিয়া গত বৎসর আগস্টে প্রকাশিত গেজেট ‘মন্দের ভালো’ হিসাবে গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু এক বৎসর অন্তে মহাপরিকল্পনার অন্তত সাতটি ক্ষেত্রে যেই সংশোধন করা হইল, তাহাতে পরিস্থিতির অবনতি বৈ উন্নতি ঘটিবে না। এইরূপ তড়িঘড়ি সংশোধনের নেপথ্যে যে প্রভাবশালী ভূমি ও আবাসন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, জলাশয় ভরাটকারী ও তাহাদের সুবিধাভোগীরা সংশ্লিষ্ট– উহা বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। স্মরণে রহিয়াছে, দীর্ঘ প্রণয়ন ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালের জুন মাসে পাঁচ বৎসর মেয়াদি প্রথম ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশের মাত্র পাঁচ দিবসেই উহা স্থগিত করা হইয়াছিল। এইবারও গেজেট প্রকাশ হইবার পর হইতে ঐ গোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ প্রয়োগ করিতেছিল। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় সংশোধন সেই চাপের নিকট নতি স্বীকারেরই নিদারুণ প্রমাণ হইয়া থাকিল।
উদ্বেগের বিষয়, আদি ড্যাপের পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন দর্শনে ব্যাপক ব্যত্যয় ঘটাইয়া এমন সময় সংশোধনী আসিল যখন ঢাকা শহরের পরিস্থিতি ক্রমাবনতিশীল। ঘিঞ্জি বসতি, উন্মুক্ত স্থান ও উদ্যানের সংকট, যানজট, বায়ুদূষণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা, জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় প্রভৃতি কারণে বসবাসযোগ্যতা সূচকগুলিতে ঢাকা প্রতি বৎসরই তলানিতে অবস্থান করিতেছে। পরিবর্তিত জলবায়ুর কথাও বিস্মৃত হওয়া চলিবে না। একদা নদী, খাল ও জলাধারবহুল ঢাকায় ক্রমে বাড়িতেছে জলাবদ্ধতা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে এই নগরী জলমগ্ন হইয়া পড়িয়াছিল। এহেন পরিস্থিতিতে সংশোধনের নামে ড্যাপের বিকৃতি যে আত্মঘাতীই হইবে, নীতিনির্ধারকগণের কেহই কি উহা বুঝিতে পারিতেছেন না?
- বিষয় :
- সম্পাদকীয়
- ‘ফুটো’ ড্যাপ লইয়া কী করিব?