ঢাকা সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

‘ফুটো’ ড্যাপ লইয়া কী করিব?

‘ফুটো’ ড্যাপ লইয়া কী করিব?

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ‘ড্যাপ’ লইয়া এক যুগ ধরিয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে মূলত বসবাসযোগ্যতায় ছাড় দিয়া গত বৎসর আগস্টে প্রকাশিত গেজেট ‘মন্দের ভালো’ হিসাবে গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু এক বৎসর অন্তে মহাপরিকল্পনার অন্তত সাতটি ক্ষেত্রে যেই সংশোধন করা হইল, তাহাতে পরিস্থিতির অবনতি বৈ উন্নতি ঘটিবে না। এইরূপ তড়িঘড়ি সংশোধনের নেপথ্যে যে প্রভাবশালী ভূমি ও আবাসন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, জলাশয় ভরাটকারী ও তাহাদের সুবিধাভোগীরা সংশ্লিষ্ট– উহা বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। স্মরণে রহিয়াছে, দীর্ঘ প্রণয়ন ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালের জুন মাসে পাঁচ বৎসর মেয়াদি প্রথম ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশের মাত্র পাঁচ দিবসেই উহা স্থগিত করা হইয়াছিল। এইবারও গেজেট প্রকাশ হইবার পর হইতে ঐ গোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ প্রয়োগ করিতেছিল। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় সংশোধন সেই চাপের নিকট নতি স্বীকারেরই নিদারুণ প্রমাণ হইয়া থাকিল।

যেই মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সহিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষের সহস্র-লক্ষ কোটি টাকা মুনাফার প্রশ্ন জড়িত, তথায় চাপ নিশ্চয়ই আসিবে। আমাদের প্রশ্ন, সামষ্টিক স্বার্থ ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইবার পরিবর্তে সরকার সেই চাপের নিকট নতি স্বীকার করিবে কেন? যেই প্রক্রিয়ায় সংশোধন করা হইল, উহাও কম প্রশ্নবিদ্ধ নহে। এইরূপ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি নথিতে পরিবর্তন আনিতে হইলে সকল অংশীজনের সহিত আলোচনা অবশ্যকর্তব্য। তৎপরিবর্তে বলিতে গেলে চুপিসারেই কার্য সম্পন্ন হইয়াছে। সমগ্র প্রক্রিয়ায় আর যাহাই হউক জনস্বার্থ রক্ষিত হয় নাই– সংশোধন বিষয়ে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মন্তব্য করিতে সম্মত না হইবার মধ্য দিয়াই বোঝা যায়। সংশোধন যদি অনিবার্যই হইয়া থাকে, সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হইতে ভয় কীসের? আমরা মনে করি, সংশোধিত ড্যাপে যেই প্রকারে ভবনের উচ্চতা, চতুষ্পার্শ্বে মুক্ত স্থান ছাড় কিংবা ভূমির শ্রেণি প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হইয়াছে, তাহাতে মহাপরিকল্পনা এক প্রকার ফুটোই হইয়া গিয়াছে। এই ফুটো ড্যাপ লইয়া আমরা কী করিব?

উদ্বেগের বিষয়, আদি ড্যাপের পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন দর্শনে ব্যাপক ব্যত্যয় ঘটাইয়া এমন সময় সংশোধনী আসিল যখন ঢাকা শহরের পরিস্থিতি ক্রমাবনতিশীল। ঘিঞ্জি বসতি, উন্মুক্ত স্থান ও উদ্যানের সংকট, যানজট, বায়ুদূষণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা, জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় প্রভৃতি কারণে বসবাসযোগ্যতা সূচকগুলিতে ঢাকা প্রতি বৎসরই তলানিতে অবস্থান করিতেছে। পরিবর্তিত জলবায়ুর কথাও বিস্মৃত হওয়া চলিবে না। একদা নদী, খাল ও জলাধারবহুল ঢাকায় ক্রমে বাড়িতেছে জলাবদ্ধতা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে এই নগরী জলমগ্ন হইয়া পড়িয়াছিল। এহেন পরিস্থিতিতে সংশোধনের নামে ড্যাপের বিকৃতি যে আত্মঘাতীই হইবে, নীতিনির্ধারকগণের কেহই কি উহা বুঝিতে পারিতেছেন না?

আরও পড়ুন