জন্মিলে যদিও মরিতেই হয়– প্রযোজ্য পরিস্থিতিতে উভয় ক্ষেত্রে সনদের বাগড়া নেহাত কম নহে। বিশ্বব্যাপীই জন্মসনদের বিড়ম্বনা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রেরও উপজীব্য। কিন্তু বাংলাদেশে যাহা ঘটিতেছে, উহা নজিরবিহীন। একদা যদিও জনপ্রতিনিধি প্রদত্ত ‘যাহার জন্য প্রযোজ্য’ সনদ দিয়াই চলিত; জন্মসনদ প্রক্রিয়া সুরক্ষিত, সহজ ও সুলভ তথা ‘ডিজিটাল’ করিতে গিয়া নাগরিক বিড়ম্বনা বহুগুণ বৃদ্ধি পাইয়াছে। বিদ্যালয়ে ভর্তি কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের ন্যায় ১৯ প্রকার কর্মে জন্মসনদ প্রয়োজন হইলেও ‘সার্ভার জটিলতা’ থাকায় উহা ‘সোনার হরিণ’ হইয়া উঠিয়াছে। এই সনদের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে অধিকাংশ সময়ই প্রবেশ দুঃসাধ্য। সম্ভব হইলেও তথ্য-উপাত্ত সন্নিবেশ করিতে গিয়া বিগড়াইয়া যাইতেছে। বুধবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দিবস ঘুরিয়াও জন্মসনদ মিলিতেছে না।
স্বীকার্য, জন্মসনদ প্রক্রিয়া বিকেন্দ্রীকরণ করিয়া তুলিতে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট কসরত করিয়াছে। সমগ্র দেশে সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের ছয় সহস্রাধিক আইডি হইতে জন্মনিবন্ধন করিবার অবকাশ রহিয়াছে। কিন্তু সার্ভারে যদি প্রবেশ কিংবা তথ্য-উপাত্ত সন্নিবেশ করাই না যায়, তাহা হইলে তো সকলই গরল ভেল! দেখা যাইতেছে, সার্ভার বন্ধ থাকিলে কিংবা বিগড়াইয়া গেলে বিকল্প উপায়ও রাখা হয় নাই। আবার রাজধানীতে জন্মনিবন্ধন কাজ ওয়ার্ড কাউন্সিলদের নিকট সোপর্দ করিলেও জনবল কিংবা যন্ত্রপাতি দেওয়া হয় নাই। যেই দেশে প্রতি চার মিনিটে গড়ে ২১ জন শিশু জন্মগ্রহণ করিতেছে, তথায় জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়ার এই হাল প্রমাণ করে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লইয়া সংশ্লিষ্টরা কতটা উদাসীন। ঔদাসীন্যের কারণেই ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সার্ভার হইতে সাত কোটি বঙ্গ-সন্তানের জন্মনিবন্ধনের তথ্য হাওয়া হইয়া গিয়াছিল। ঐ সময় সংশ্লিষ্টরা ছাড় পাইয়াছে বলিয়াই আজ জন্মসনদ প্রক্রিয়ার ‘ডিজিটাল মৃত্যু’ দেখিতে হইতেছে।
আমরা খতাইয়া দেখিতে বলিব, জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়ার সার্ভার, হোস্টিং, ব্যান্ডউইথ ও স্টোরেজ মানসম্মত কিনা। স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় হইতে নাগরিক ভোগান্তির জন্য সার্ভারের পরিবর্তে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা কার্যালয়ে দৃষ্টি দিবার যেই ইঙ্গিত দেওয়া হইয়াছে, উহাও ধর্তব্য। কারণ নির্ধারিত ফি দিয়া জন্মনিবন্ধন করিতে বা সনদ লইতে গেলে সার্ভার বিগড়াইয়া গেলেও ‘অনানুষ্ঠানিক’ পথে পয়সা খরচ করিলে সবই ঠিকঠাক– এমন অভিযোগও কম নাই। নীতিনির্ধারকদের বলি– জন্মনিবন্ধন কিংবা সনদের ন্যায় বহুল প্রয়োজনীয় ও প্রচলিত ব্যবস্থায় যখন এই পরিস্থিতি, তখন সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় কেঁচে গণ্ডূষ প্রত্যাশা করা অত্যুক্তি হইবে কি?