ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

বহু মত-পথের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিশারি

বহু মত-পথের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিশারি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

অদ্য ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদের (সা.) পবিত্র জন্ম ও ওফাত দিবস। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের একই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। এই কারণে দিনটি মুসলমানদের নিকট অশেষ পুণ্যময় ও আশীর্বাদধন্যরূপে খ্যাত। সমগ্র বিশ্বের মুসলমানগণের ন্যায় এই দেশের মুসলমানগণও তাই দিবসটি আনন্দের পাশাপাশি ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়া পালন করিতেছেন।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) কৈশোরেই সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও সত্যবাদিতার জন্য ‘আলামিন’ বা বিশ্বস্ত হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। ঐ বয়সেই তিনি হিলফুল ফুজুল বা শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যাবতীয় অন্যায়-অত্যাচার ও উগ্রতা পরিহারপূর্বক মক্কায় একটা আদর্শ সমাজ গঠনে ব্রতী হন। সেই সময় সমগ্র আরব অঞ্চল নিমজ্জিত ছিল অশিক্ষা, কুসংস্কার, গোষ্ঠীগত হানাহানি, নির্মম দাসপ্রথা, নারীর প্রতি চরম বৈষম্যসহ নানা প্রকার সামাজিক অনাচারে। মাত্র ৬৩ বৎসরের জীবনে মহানবী (সা.) ঐ অঞ্চলে এই সকল অনাচারের অবসান ঘটান। শুধু উহাই নহে; একটা সংঘাতমুখর সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার এহেন অনন্য নজির স্থাপনের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকেও দেখাইয়াছেন আলোর দিশা। ভদ্রতা, বিনয় ও ভালোবাসা দিয়া ভিন্নমতের মানুষের মন জয় করিবার পাশাপাশি তিনি বাস্তব চর্চার মাধ্যমে দেখাইয়াছেন কীভাবে বিশেষত ক্রীতদাস, মজুর, নারী তথা সমাজের নিপীড়িত-শোষিত মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা যায়। যেই কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইসলাম আরব অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকেনি; অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কী প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত দুই অঞ্চলকে একসঙ্গে জুড়িয়া একটি একক রাষ্ট্র গড়িয়া তোলা যায়; বিবদমান মক্কা-মদিনাকে বিখ্যাত হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করিবার পথ তিনিই দেখাইয়াছিলেন। যে কোনো রাষ্ট্রে একাধিক মত, ধর্ম ও জাতের মানুষ থাকাই স্বাভাবিক। মহানবীর (সা.) আমলের আরবও তাহার ব্যতিক্রম ছিল না। আর এই কারণে তথায় সাম্প্রদায়িক হানাহানিও কম ছিল না। কিন্তু মহানবী (সা.) ঐ সমস্যারও দারুণ সমাধান দেন। তাঁর তৈরি মদিনা সনদ এই কারণেই ইতিহাসে বিখ্যাত হইয়া আছে। এই সনদ প্রণয়ন করিতে গিয়া মহানবী (সা.) রাষ্ট্রনায়কোচিত যেই প্রজ্ঞা ও উদারতার পরিচয় দেন, উহা এই আধুনিক যুগেও বিরল বলিলে ভুল হইবে না। কিন্তু দুঃখজনক হইলেও সত্য, অদ্য মহানবীর (সা.) অনুসারী বলিয়া যাহারা দাবি করেন তাহারাও, এমনকি তাঁহার নামে রাষ্ট্র চালাইতে গিয়াও সেই প্রজ্ঞা ও উদারতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ। অধিকন্তু যাহারা মহানবীর (সা.) জীবন ও কর্ম মানুষের মধ্যে প্রচারের দায়িত্ব স্বীয় স্কন্ধে তুলিয়া লইয়াছেন, তাহাদেরও অনেকে রাষ্ট্র ও সমাজে মিলনের বদলে বিভেদ, সৌহার্দ্যের বদলে সংঘাত-সংঘর্ষকে উস্কাইয়া দিতেছেন। তাই ঈদে মিলাদুন্নবীর এই দিনে আমাদের প্রত্যাশা, মহানবীর (সা.) জীবন ও আদর্শ হইতে সকলেই শিক্ষা গ্রহণ করুক।

আরও পড়ুন