ঢাকা রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

সাক্ষাৎকার: ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

সুবিধাভোগীরা সংকটের সমাধান হতে দিচ্ছে না

সুবিধাভোগীরা সংকটের সমাধান হতে দিচ্ছে না

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক ওয়াসিফ

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন ও আর্থিক অর্থনীতিতে এমএসসি এবং অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বাণিজ্যনীতি ও ব্যবসায়িক কূটনীতিতে কার্লটন ও অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদপ্রাপ্ত। শিক্ষকতা করেছেন রয়্যাল হলওয়ে, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাজ করেছেন জাতিসংঘ, আইইউসিএনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য বই– যুদ্ধোত্তর থেকে করোনাকাল (২০২২), ফিসকাল অ্যান্ড মানিটারি পলিসি’জ ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিজ (২০২১), নাম্বারস অ্যান্ড ন্যারেটিভস ইন বাংলাদেশ’স ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (২০২২), স্টেইট বিল্ডিং অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসি’জ ইন ডেভেলপিং কান্ট্রিজ (২০২২), হোয়াই ইকোনমিক প্রডাক্টিভিটি ফেইলস (২০২৩) ইত্যাদি।

ফারুক ওয়াসিফ: বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিম্নমুখী। রিজার্ভের মজুত, জ্বালানি নিরাপত্তা, ঋণমান, টাকার মান সব পড়তির দিকে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের র‍্যাঙ্কিংয়ে ‘ডি’ গ্রেড পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। আমাদের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা আসলে কোন গ্রেডে যাচ্ছে?

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: বাংলাদেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংকটের ফল সবার ওপরে পড়ছে। মূল্যস্ফীতি জীবনযাপনকে কঠিন করে তুলেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেখানোর জন্য ব্যবসায়ীদের জোর করে আমদানি কমাতে বলা হচ্ছে। এতে করে তো উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ম্যান্ডেট ছিল মূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার। সে ব্যাপারে তাদের কোনো কার্যকারিতাই দেখা যায়নি। সমস্যা সমাধানে তো অনেকদিন সময় পাওয়া গেছে। তারপরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সংকটগুলো অভ্যন্তরীণভাবে সৃষ্টি হয়েছে। সংকটের গোড়ায় রয়েছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা।

সমকাল: সংকট কী সবার? আমরা দেখছি এ সময় অনেকেই লাভবান হচ্ছে। খাদ্যের বাজারে কয়েকটি কোম্পানি অতি মুনাফা করছে বলে অভিযোগ। জ্বালানি খাতে গুটি কতক কোম্পানি লাভবান হচ্ছে। এলএনজি আমদানিকারকরা লাভবান হচ্ছে...

তিতুমীর: সংকট তৈরির চেষ্টাও যেমন আছে তেমনি সংকটের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার চেষ্টাও চালু আছে। অনর্জিত আয়, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার অথবা আয় বিদেশে অবস্থান করা চলছে। এর লক্ষণ দেখা যায় গত বছরে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের ঘটনায়। আমরা লক্ষ্য করেছি, আমদানি লাফিয়ে বেড়েছে। অর্থাৎ আমদানির নামে টাকা পাচার হয়েছে। যে অর্থবছরটা শেষ হলো তার হিসাব বলছে, রপ্তানি করা হয়েছে যে পরিমাণ টাকা, সে পরিমাণ টাকা বাংলাদেশে আসেনি। তার মানে ওই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে লাভবান রাখতে গিয়ে বড় রকমের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। একই কায়দায় বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি কমছে না। সুবিধাভোগী সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে জ্বালানি খাতে। ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সংকট সমাধানে মৌলিক জ্বালানির ব্যবস্থা না করে বরং সুবিধাভোগীদের লাভবান করার জন্য এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে। তার মানে নীতিকাঠামো কতগুলো গোষ্ঠীকে লাভবান করার জন্য হচ্ছে এবং তারাই নীতি কাঠামোকে কবজা করছে। এজন্যই জিডিপি’র সঙ্গে কর অনুপাত বাড়ানো যাচ্ছে না। গোষ্ঠীতন্ত্রকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দেওয়ার জন্য, কর অব্যাহতি অথবা কর ফাঁকি অথবা এমন সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা ক্রমাগত এই ব্যবস্থা থেকে লাভবান হতে পারে। এই গোষ্ঠীতন্ত্রই আসলে বাংলাদেশের বর্তমান সংকট তৈরি করেছে। লাগাতারভাবে ঋণ বাড়ার মাধ্যমে অথবা অভ্যন্তরীণ সম্পদ না বাড়ানোর মাধ্যমে সেটা হয়েছে। তার মানে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার পেছনেও আছে এই গোষ্ঠীতন্ত্র। এই গোষ্ঠীতন্ত্রই চায় অবস্থার উত্তরণ না ঘটুক।

সমকাল: যারা এই সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী এবং এই সংকট থেকে লাভবান হচ্ছে, তাদের কাছে কি এর সমাধান আছে?

তিতুমীর: দুনিয়ার কোথাও তা হয়নি। সংকটের কার্যকারণগুলো খুব পরিষ্কার। যেমন ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে দুটি কারণে। একটি হলো, সরকার প্রচুর পরিমাণে ঋণ করেছে এবং ঋণ বাবদ ব্যয় দিতে হচ্ছে। সেই ঋণের টাকা এমন সব প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে, যার খরচ দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ এসব প্রকল্পে লাভবান গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তারা চাইবে এই অবস্থাই বজায় থাকুক। সংকটের সমাধান তারা চাইবে না। দ্বিতীয়ত, এই ব্যবস্থা থেকে যে মুনাফা বা অনর্জিত আয় তারা পাচার করেছেন তা ঢাকতেই কিন্তু আমদানির বিরাট উল্লম্ফন দেখানো হয়েছে। এ বছরের আগের বছর আমদানিতে ২৯ শতাংশ উল্লম্ফন ঘটেছে। আমরা যদি ধরে নেই, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাপ্লাই চেইনে সমস্যার কারণে এখানে দাম বেড়েছে– সেটা হয়তো ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য জাহাজীকরণ হয়, সেখানে তো আমদানির পরিমাণের তেমন কোনো পার্থক্য হয়নি! তার মানে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ থেকে পুঁজি পাচার ঘটেছে। তার সঙ্গে সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে গেছে। তার মানে হাওলা ও হুন্ডি জারি আছে। যদি এই অভিযোগগুলো তদন্ত করা হতো এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তাহলে এই সংকট থাকত না। দরকার ছিল প্রতিটি কোম্পানির ব্যালান্স শিট দেখে তাদের অর্থ পাচারের পরিমাণ বের করা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। স্বাধীনতার শুরু থেকে ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫২ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। পরের সময়ে সেটা দ্বিগুণ হয়েছে। এটা কমানো যেত, যদি অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়ানো যেত।

সমকাল: মানে উচ্চবিত্তের ওপর আরও করারোপ করা দরকার? কিন্তু দেখা যাচ্ছে সরকারের রাজস্ব বিভাগ বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এমনকি ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ওপরও করারোপ করছে। এভাবে কি জাতীয় আয় বাড়বে?

তিতুমীর: যে জিডিপি দেখানো হয়েছে, এই জিডিপি অনুযায়ী বাংলাদেশের কর জিডিপি রেশিও এমনটা হওয়ার কথা নয়। ফাঁকটা হচ্ছে, বিভিন্ন সুবিধাভোগীর এসআরও এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কর সুবিধা, কর অব্যাহতি, কর জালিয়াতির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। একটা ব্রিটিশ কোম্পানি—ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি— তারা তাদের প্রয়োজনে ভারতবর্ষে একটা প্রশাসন তৈরি করে। সেই প্রশাসনের মাধ্যমে মেট্রোপলিস অর্থাৎ লন্ডনে সম্পদ পাঠাতো। ভারতবর্ষের সম্পদে ইংল্যান্ড ধনী হয়েছে। অথচ সেটা তো ছিল কৃষি অর্থনীতি। আজকের অগ্রসর বাস্তবতাতেও সেই সম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে না কেন, জাতীয় আয় বাড়ছে না কেন। কারণ ওই গোষ্ঠীতন্ত্র। পুরো ব্যবস্থাপনাটা গোষ্ঠীতন্ত্র, তাদের সুবিধার জন্য বজায় রেখেছে। এ জন্য আয় বাড়ছে না কিন্তু ঋণের পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে। অর্থাৎ ডলারের ক্ষেত্রে যেটা দেখা গেল। তৃতীয় হচ্ছে, খাদ্যের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রভাব সাধারণ মানুষ, নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ এবং দরিদ্র মানুষের ওপর সমানভাবে পড়েছে। অর্থাৎ, তারা বড় দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।

এখানে তিনটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং সবই গোষ্ঠীতন্ত্রকে সহায়তা করেছে। প্রথমে কতগুলো পণ্যের দাম নির্ধারিত করা হলো। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে তারা তখন দাম কমায়নি। দ্বিতীয় বিষয়, কতগুলো দেশের ওপর নির্ভরশীলতা। আমরা জানি বাংলাদেশের কোন কোন পণ্য আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামাও সবার জানা। তাহলে সেইসব দেশ থেকে আমদানি করা হয়নি কেন? নির্দিষ্ট যারা আমদানিকারক, তাদের সুবিধা দেওয়ার জন্যই এই কাজটা করা হয়েছে। তার মানে, আমদানিতে বৈচিত্র্য আনা হয়নি বরং খাদ্যের ক্ষেত্রে একচেটিয়াতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। সচেতনভাবে একচেটিয়াতন্ত্র তৈরি করার মাধ্যমে খাদ্যের বাজারকে একটা গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি করা হয়েছে। একই কথা ব্যাংক ব্যবস্থার বেলাতেও প্রযোজ্য।

একই কায়দা করা হয়েছে জ্বালানি নিরাপত্তার বেলায়। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে যে, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ এবং সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। আমরা সবসময় বলে আসছি যে, বাংলাদেশ এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হবে এবং এটা সম্ভব। তার জন্য দরকার হবে জ্বালানি। সেখানেও সেই একচেটিয়াতন্ত্র। ক্যাপাসিটি চার্জের তথ্যে দেখা যায়, মাত্র গুটি কতক কোম্পানির কাছে এটা বাঁধা পড়ে আছে। তার মানে অনর্জিত আয়ের মাধ্যমে সর্বব্যাপী একচেটিয়াতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। এটা সচেতনভাবেই হয়েছে। এসবের প্রতিকারে আইএমএফ একটা প্রোগ্রাম তৈরি করেছে, কিন্তু সফল হয়নি। কোনো লক্ষ্যই অর্জিত হয়নি। আইএমএফ বুঝেছে যে, ট্যাক্স বাড়াতে হবে। কিন্তু সংস্থাটি এ কথাটি বলেনি যে, সমস্যার সমাধান হচ্ছে রাজনীতিতে। আমাদের যে ব্যবস্থাপনা, সেই ব্যবস্থাপনা একচেটিয়াতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থাপনা। সুতরাং অর্থনৈতিক সংকটের সুবিধাভোগীদের দ্বারা এর সমাধান আসবে না।

সমকাল: তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, সংকটটা অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে আসেনি। এটি একটা গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই হয়েছে?

তিতুমীর: আসলে বুঝতে হবে যে, রাজনৈতিক বন্দোবস্তের চরিত্র কী? রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে, ক্ষমতা আসলে কার কাছে আছে। ক্ষমতা যদি অধিকাংশ মানুষের কাছে থাকে, তখন জবাবদিহি তৈরি হয়। একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। ক্ষমতা যদি অধিকাংশ মানুষ এবং তাদের প্রতিনিধিদের কাছে থাকে, তাহলে ব্যবস্থাপনা জনগণের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য হয়। আজকের যাবতীয় সংকটের মৌলিক কারণ হলো ব্যবস্থাপনাগত দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহির অভাব। কারণ ক্ষমতাটা কেন্দ্রীভূত হয়ে একদিকে চলে গেছে। এটাই বাংলাদেশের বর্তমানের মৌলিক সমস্যা। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে গেলে সক্ষমতা তৈরির চেষ্টাতেও ব্যাঘাত ঘটে। দক্ষ জনগোষ্ঠী কিন্তু সিভিল সার্ভিসে আসছে না। বরং দেখা যাচ্ছে চাটুকারিতা ও লেজুড়বৃত্তি।

সমকাল: আমাদের উন্নয়নের দর্শন ছিল, উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা ও ক্ষমতার ধারাবাহিকতা এবং একক ক্ষমতা দরকার। এসব তো ছিল, তাহলে সংকট তৈরি হলো কেন?

তিতুমীর: সবই ঠিক আছে যদি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না হয়। ক্ষমতার মূল কাজ যদি হয় ভাগবাটোয়ারা করা, তা হলে হবে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি, উন্নয়নের মডেল মিরাকল থেকে মরীচিকায় পরিণত হয়েছে। প্রতিটি জায়গায় যদি প্রশ্ন ওঠে যে, আমি কী পাব। তাহলে তো হবে না। আসলে দরকার ছিল পাবলিক অর্ডার। অর্ডার বজায় রাখার জন্য দরকার জবাবদিহি। জবাবদিহি না থাকলে কর্তৃত্ববাদ হয়, তখন গোষ্ঠীতন্ত্র চাপ তৈরি করে তাদের পক্ষের নীতিকাঠামো তৈরি করিয়ে নেয়। সকল স্তরে লাভালাভের বৃত্ত তৈরি হয়। কে কোন স্তরে কতটুকু পাবে এবং কে পাবে না, সেই ব্যবস্থা তৈরি হয়। ওই ব্যবস্থা আর সামনের দিকে যায় না। বাংলাদেশে এই অবস্থাই তৈরি হয়েছে।

সমকাল : রাজনৈতিক অর্থনীতির জায়গা থেকে অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান রাজনৈতিক সংকটের ছাড়া সম্ভব কিনা?

তিতুমীর: অবশ্যই না। বিশুদ্ধ অর্থনীতি বলে কিছু নেই। আমাদের দরকার এমন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা, যাতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে। যতক্ষণ জনগণ তার অধিকার প্রয়োগের সুযোগ না পাচ্ছে, ততক্ষণ এই চিত্রই বজায় থাকবে। মূল্যস্ফীতির কশাঘাত, ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার জন্য ডলারের সরবরাহ, কর্মসংস্থানে উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জ্বালানি নিরাপত্তায় সংকট। অর্থাৎ অর্থনীতির বনিয়াদে সংকট চলে এসেছে। এই সংকটগুলো তৈরি করেছে একটি গোষ্ঠীতন্ত্র। তারা কোনোভাবেই এ থেকে উত্তরণ চায় না। সংকটের ভুক্তভোগী ও সুবিধাভোগীদের মধ্যেই রয়েছে মূল দ্বন্দ্ব। এর সমাধান রয়েছে জনগণের কাছে। আগে ছিল শোষক ও শোষিতের দ্বন্দ্ব, এখন হয়েছে সুবিধাভোগী বনাম ভুক্তভোগীদের দ্বন্দ্ব।

সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।

তিতুমীর: সমকালকেও ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন