ঢাকা বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

আউটসোর্সিংয়ের আয়ে হাত কেন?

আউটসোর্সিংয়ের আয়ে হাত কেন?

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

ফ্রিল্যান্সারগণের আয়ের উপর ১০ শতাংশ উৎসে কর আরোপ লইয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপনটি যেই কোনো বিবেচনাতেই অসময়োচিত। গৃহে বসিয়া বৈদেশিক গ্রাহকের কাজ মূলত অনলাইনে করিয়া দিবার ক্ষেত্র তথা ‘আউটসোর্সিং’ বাংলাদেশে কী মাত্রায় সম্প্রসারিত হইয়াছে, সংখ্যাগত প্রবৃদ্ধিতেই উহা স্পষ্ট। ২০১১ সালে যেইখানে দেশে মাত্র ১০ সহস্র ‘ফ্রিল্যান্সার’ কাজ করিতেন, বর্তমানে উহা ১০ লক্ষ ছাড়াইয়া গিয়াছে।

করোনা পরিস্থিতিতেও অনেকে স্থায়ী চাকরির বদলে ফ্রিল্যান্সিংই শ্রেয়তর ভাবিয়াছেন, ভুলিয়া গেলে চলিবে না। সংখ্যাগত প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি যখন আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিংয়ে গুণগত উৎকর্ষের দাবি ক্রমে জোরালো হইতেছে, তখন উৎসে ১০ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত সম্ভাবনাময় খাতটির ব্যাপারে নিরুৎসাহই ছড়াইয়া দিবে।

স্থায়ী কর্মসংস্থানের দুর্মূল্য ও দুর্গতির এই সময়ে বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী যখন স্বাধীন ও সম্ভাবনাময় পেশাটি ক্রমবর্ধমান হারে বাছিয়া লইতেছেন; যখন মোট ফ্রিল্যান্সারের ১৬ শতাংশ লইয়া বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে উঠিয়া আসিয়াছে; তখন এইরূপ শঙ্কা ও বিভ্রান্তি ছড়াইবার নেপথ্যে কেহ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করিলে দোষ হইবে কি?

প্রজ্ঞাপনটি ফ্রিল্যান্সারগণের আয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না বলিয়া রাজস্ব বোর্ডের একজন কর্মকর্তা যদিও ‘আশ্বস্ত’ করিয়াছেন, সংগত এই বিষয়ে ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ থাকিবার হেতু কী? ফেসবুক বা ইউটিউব মনিটাইজেশন হইতে আয়ের বিষয়টিই যদি প্রজ্ঞাপনের উপজীব্য হইবে, উহা স্পষ্ট করিয়া বলিতে কী অসুবিধা? বিষয়টি অবিলম্বে স্পষ্ট না করিলে এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না যে, কর এড়াইতে গিয়া অনেকে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশেই রাখিয়া দিবে কিংবা বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের বদলে অবৈধ হুন্ডি বাছিয়া লইবে। ফলস্বরূপ ডলার সংকটের এই সময়ে পরিস্থিতির অবনতি বৈ উন্নতি ঘটিবে না। বস্তুত আউটসোর্সিং তথা ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রণোদনা ঘোষণা বরং ডলার সংকট দূর করিবার অন্যতম উপায় হইয়া উঠিতে পারে। প্রবাস হইতে রেমিট্যান্স প্রেরণে যদি প্রণোদনা মিলে, ঘরে বসিয়া একই যাত্রায় পৃথক ফল মিলিবে কেন?

আমরা মনে করি, আউটসোর্সিংয়ে করারোপ করিবার প্রকৃত ইচ্ছাও যদি কর্তৃপক্ষের থাকিয়া থাকে, উহা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়িবার নামান্তর। কারণ সংখ্যাগত প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকিলেও এই দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পথ এখনও মসৃণ নহে। সংশ্লিষ্টরা জানাইয়াছেন, মার্কেট প্লেস ফাইবারের সার্ভিস ফি, গিগ প্রমোশনসহ অন্যান্য ফি মিটাইয়া মোট আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশই খরচ হইয়া যায়। উপরন্তু দেশে পেমেন্ট গেটওয়ে পেপাল সুবিধা না থাকিবার কারণে বিদেশ হইতে কষ্টার্জিত আয় দেশে আনিতে গিয়াও পোহাইতে হইতেছে আর্থিক ও প্রক্রিয়াগত ঝামেলা।

প্রতিবেশী ভারত, এমনকি মিয়ানমারে পেপল সুবিধা চালু থাকিলেও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে আগাইয়া থাকা বাংলাদেশে উহা সম্ভব হইতেছে না। এই পরিস্থিতিতে বাড়তি করারোপ সেই বাংলা প্রবাদটাই স্মরণ করাইয়া দেয়– ভাত দিবার মুরাদ নাই, কিল মারিবার গোঁসাই!

আরও পড়ুন