ঢাকা বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত

অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০

সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে বৃহৎ পতন আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে অশনিসংকেত। সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা দেশে ১৩৪ কোটি ৩৬ লক্ষ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাঠাইয়াছেন, যাহা গত ৪১ মাসে সর্বনিম্ন। রেমিট্যান্সের এই পতন এমন সময়ে ঘটিল যখন দেশের রপ্তানি আয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হইতেছে না। অতএব ক্ষীয়মাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্ভরণ এবং আমদানি বিল পরিশোধের জন্য রেমিট্যান্সই প্রধান ভরসা। এই অবস্থা অব্যাহত থাকিলে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি খাতের জন্য বিভিন্ন সময়ে গৃহীত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধেও সংকট সৃষ্টি হইতে পারে। একই সঙ্গে বিশ্বপরিসরে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা সম্পর্কেও প্রশ্নের জন্ম দিবে, যাহা আবার দ্বিধারী তরবারির ন্যায় নূতন বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগপ্রাপ্তি কঠিন করিয়া তুলিতে পারে, যাহার পরিণামে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষত ডলার প্রবাহ আরও হ্রাস পাইতে পারে।

এই ঘূর্ণায়মান সংকটের জন্য অর্থনীতিবিদরা বরাবরই সরকারের ভুল আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনা নীতিকে দায়ী করিয়া আসিতেছেন। তাহাদের অভিযোগ, একদিকে বিশেষত গত এক দশকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল নজরদারির সুযোগে ব্যাংকিং খাত হইতে প্রভাবশালী মহল ঋণের নামে শত সহস্র কোটি টাকা লুট করিয়া বিদেশে পাচার করিয়াছে; অপরদিকে এই চক্রেরই সুবিধার্থে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় ডলারের মূল্য সরকারি চ্যানেলে কম রাখা হইয়াছে। তাহাদের অভিমত, এই কারণেই ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট ডলার সংকট হইতে অপরাপর দেশ বাজারনির্ভর ডলার ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থার মাধ্যমে ইতোমধ্যে অনেকটা মুক্ত হইলেও বাংলাদেশ এখনও খাবি খাইতেছে। আমরা জানি, বিদ্যমান ডলার ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়ার কারণে গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংক অপেক্ষা খোলাবাজারে ডলারের মূল্য ৬-৭ টাকা বেশি ছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠাইতে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিকতর হারে হুন্ডির দ্বারস্থ হইয়াছেন।

সমস্যার টেকসই সমাধান হিসাবে ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার অবশ্যই জরুরি। তবে আপাতত ডলারের বিনিময় হার বাজারের উপর ছাড়িয়া দিবার বিকল্প নাই। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রাপ্তির সুবিধা ও গুরুত্ব সম্পর্কে প্রবাসীদের সচেতন করিতে জোরদার প্রচারাভিযান চলিতে পারে।

আরও পড়ুন