ইসলাম ও সমাজ
ক্ষমাকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন

প্রতীকী ছবি
মো. শাহজাহান কবীর
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪ | ২২:৫২
পবিত্র কোরআনের সুরা আল ইমরানের ১৫৯ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘মহান রবের অনুগ্রহে আপনি তাদের প্রতি কোমল হয়েছেন। আপনি যদি কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছে আসত না। একই আয়াতে এরপর বলা হয়েছে, আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন। তাদের জন্য রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।’
উক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে মহান আল্লাহ রাসুলে কারিম (সা.)-এর প্রতি মানুষের আকর্ষণের কারণ হিসেবে প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়াকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এই গুণের অধিকারী না হলে তার পরিণাম কী হতো তাও বলে দিয়েছেন। পুনরায় মহান আল্লাহ প্রতিশোধ ত্যাগ করে ক্ষমার পথ অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন।
ক্ষমা ও বিনয়ের মাধ্যমেই মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়। সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্বোপরি কাউকে ক্ষমা করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর ক্ষমা লাভ ও ভালোবাসা পাওয়া যায়।
পবিত্র কোরআনের সুরা আল ইমরানের ১৩৪ আয়াতে এরশাদ হয়েছে– ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায় ব্যয় করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে– এ ধরনের সৎকর্মশীলদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।’ আল্লাহর ভালোবাসা মুমিন জীবনের পরম পাওয়া। মুমিন বান্দা যখন আল্লাহর ভালোবাসা পাবে তখন তার দুনিয়া ও আখিরাতের সংকট দূর করে দিতে পারেন। আল্লাহর ভালোবাসার মাধ্যমে আখেরাতে মুমিন বান্দা যদি ক্ষমা পেয়ে যান, তার চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!
তা ছাড়া দুনিয়ার জীবনেও কাউকে ক্ষমা করার মাধ্যমে যেমন মানসিক প্রশান্তি আসে, তেমনি সমাজের মানুষের কাছে সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, ‘সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না, আর যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেন।’ (সহিহ মুসলিম)
রাগ সংবরণ, ক্ষমা ও বিনয় একটি ইবাদত। ক্ষমা করার মনোভাব না থাকায় সমাজে প্রতিনিয়ত চলছে হানাহানি, গুম ও খুন। ফলে সামাজিক সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। সমাজ-সংসারে অশান্তি সব সময় লেগেই আছে। এমনকি সংসারে ভাঙন ও হত্যার মতো ভয়ংকর ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। ক্ষমা করার গুরুত্ব প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা সুরা তাগাবুনের ১৪ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা ক্ষমা ও সহনশীলতার আচরণ করো এবং মাফ করে দাও, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল,
অসীম দয়ালু।’
অতীতে আপনার কারও সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি আপনি তাকে ক্ষমা করে দেন, তার প্রতি বিনয় প্রদর্শন করেন তবেই আপনি প্রকৃত ক্ষমাশীল। আর এটাই মহানবীর (সা.) শিক্ষা।
যখন আপনি কাউকে ক্ষমা করবেন, তখন নিজের ভেতরে অপার্থিব একটা প্রশান্তি অনুভব করবেন, সেই সঙ্গে সমাজের মানুষের কাছেও আপনার সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
মহানবী (সা.) ছিলেন দয়া-মায়া ও ক্ষমার প্রতীক। প্রতিশোধ গ্রহণের অবারিত সুযোগ পেয়েও তিনি ক্ষমা ও দয়া দেখিয়েছেন সারাজীবন। শত্রুদের ক্ষমার অযোগ্য অনেক অপরাধকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন পরম উদারতায়।
ক্ষমা এমন এক অদৃশ্য শক্তি, যা ঘোরতর শত্রুকেও আপন বানিয়ে দেয়। আল্লাহতায়ালা সুরা হামিম আস-সাজদাহের ৩৪ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দিয়ে। ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।’ মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল
ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
- বিষয় :
- ইসলাম প্রচার