ঢাকা বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পরিবহনের রূপান্তর

নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর যানবাহনই আমাদের ভবিষ্যৎ

নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর যানবাহনই আমাদের ভবিষ্যৎ

নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর যানবাহন

শাহনুমা শারমিন

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪ | ১৭:৫৮

মানুষ তার ইতিহাসের মতোই গতিশীল ও বৈচিত্র্যময়। সেই আদিম কাল থেকে এখন পর্যন্ত বসবাস হোক বা খাবার সংস্থান, স্থান পরিবর্তনের ওপরেই রয়েছে তারা। এই প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে মানুষ আবিষ্কার করেছে চাকা, নৌকা, উড়োজাহাজ। এখন তো পানির নিচ থেকে শুরু করে মহাকাশ, এমনকি চাঁদের বুকেও পৌঁছে গেছি আমরা। এরপরও আমাদের যাতায়াতের মাধ্যম আরও বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক করতে সমানতালে কাজ চলছে। 


মানুষের যানবাহনের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হিসেবে ধরা হয় চাকাকে। আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় (বর্তমানে ইরাক) কাঠ দিয়ে তৈরি চাকার প্রচলন ঘটে। এ চাকা ঘোড়ার গাড়ি ও রথের মতো যানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। এর আগ পর্যন্ত মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা বলতে ছিল মূলত হেঁটে অথবা বড়জোর ঘোড়া, গাধা বা উটের মতো প্রাণীর পিঠে চড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া। কাছাকাছি সময়ে প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় আবিষ্কৃত হয় নৌকা। এই চাকা ও নৌকার প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের যাতায়াতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। সময় ও শ্রম বাঁচে। এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। 


চাকা আবিষ্কারেই থেমে থাকেনি মানুষ। যোগাযোগ সহজ করার জন্য প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যে গড়ে তোলা হয় সড়ক; নৌকা নোঙর করতে নদী ও সমুদ্র উপকূলজুড়ে গড়ে ওঠে বন্দর। এরপর শিল্পবিপ্লবের সময় আরও দ্রুত ও সহজে যাতায়াতের প্রয়োজন হয়। সেই প্রয়োজন মেটাতে একে একে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও দ্রুতগতিসম্পন্ন যানবাহন আবিষ্কৃত হতে থাকে। ১৮১৪ সালে আবিষ্কৃত হয় বাষ্পীয় ইঞ্জিনচালিত ট্রেন, ১৮৮৬ সালে কার্ল বেঞ্জের হাত ধরে আসে প্রথম ইঞ্জিনচালিত মোটরগাড়ি। এরপর সহজ ও দ্রুত যাতায়াত সুবিধার কারণে মোটরগাড়ি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। 


এখন যাতায়াত অনেক বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক হয়েছে। মাটি, পানি ও বাতাসে সমানভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ। অনেক দূরের পথও খুব কম সময়ে পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে, মাত্র এক দিনের মধ্যেই সারা পৃথিবী ঘুরে আসা যাচ্ছে। সমুদ্রের গভীর তলদেশ থেকে শুরু করে চাঁদের মাটিতে মানুষের অবাধ বিচরণ ঘটছে। তবে এত সব সুবিধার মাঝে একটি অসুবিধাও রয়েছে। তা হচ্ছে, যানবাহনে অনবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের কারণে হওয়া দূষণ। এই দূষণের ফলে সারাবিশ্বের প্রাণ-প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 


তবে এর সমাধান হিসেবে বিদ্যুচ্চালিত যানবাহনের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা, অনবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি (ইভি) জনপ্রিয় হচ্ছে। নরওয়ের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশে ৯০ শতাংশেরও বেশি যানবাহন বিদ্যুচ্চালিত।  দেখা যাচ্ছে, কিছু প্রতিষ্ঠান আগে আইসিই (ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিন) যানবাহন তৈরি করলেও পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে এ জায়গা থেকে সরে এসেছে। এখন পুরোপুরি বিদ্যুৎনির্ভর গাড়ি উৎপাদন করছে সেসব প্রতিষ্ঠান। মানুষ বহনের মাধ্যমে রূপান্তর এসেছে মানুষের প্রয়োজনকে ঘিরেই। এখন সবাই উপলব্ধি করছে, জলবায়ু বিপর্যয়ের মতো গুরুতর একটি বিষয় মোকাবিলা করতে হলে আমাদের যানবাহন ব্যবস্থার প্রতিও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। 


যাতায়াত দ্রুত, সহজ ও নিরাপদ করতে চাইলে আমাদের আধুনিক যানবাহন ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আবার জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলার মতো বিষয়েও আমাদের সমানভাবে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ একদিকে পরিবেশের স্বার্থ বজায় রাখবে, অন্যদিকে আমাদের গতিকে বাধাগ্রস্ত করবে না– এমন একটি উপায়ই হবে ভবিষ্যৎ যোগাযোগের মাধ্যম। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর যানবাহনই হতে পারে আমাদের আগামী। 


শাহনুমা শারমিন: লিড, ডিজিটাল মার্কেটিং, বিওয়াইডি বাংলাদেশ
 

আরও পড়ুন

×