ঢাকা মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়

যোগ্য উপাচার্য নিয়োগে করণীয় 

যোগ্য উপাচার্য নিয়োগে করণীয় 

মো. সাব্বির হোসেন

মো. সাব্বির হোসেন

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:২২ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৪:৪৪

আগস্টের শেষ সপ্তাহে সমকালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ, ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। সেখানে নিয়োগ দিতে যোগ্য উপাচার্য খুঁজছে সরকার। বাংলাদেশে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় গঠন এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি। একজন ভালো উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে স্থান পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে পারেন, যা জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক হবে। উপাচার্য নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রক্রিয়াটি গুরুত্ব সহকারে পরিচালনা করা উচিত। 
উপাচার্যের মধ্যে কৌশলগত নেতৃত্বের ক্ষমতা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে দৃঢ় নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা থাকা জরুরি। তাঁকে একাডেমিক প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধান এবং শিক্ষার উচ্চ মান বজায় রাখতে হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সহায়ক হবে। প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা, বাজেট ব্যবস্থাপনা এবং শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে উপাচার্যের দক্ষতা থাকা আবশ্যক। শিক্ষক-কর্মচারীদের সুষ্ঠু পরিচালনা, সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং আর্থিক স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক লিংকেজ ও নীতিমালা বাস্তবায়নে দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে। তাঁকে শাসন সংস্থার সঙ্গে কার্যকরভাবে কাজ করে নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে শিক্ষার মান ও গবেষণার সুযোগ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।

শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষা ব্যবস্থাপকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। প্রার্থীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরির দক্ষতা এবং ভর্তির প্রক্রিয়া ও শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধানের অভিজ্ঞতা থাকা অপরিহার্য। উপাচার্যকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করতে হয়। তাই বাহ্যিক সম্পর্কোন্নয়ন ও জনসংযোগে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। এই দক্ষতাগুলো শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক প্রভাব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

শিক্ষার মান উন্নয়ন ও নিশ্চিতকরণে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা একজন উপাচার্যের মৌলিক দায়িত্ব। সংকটের সময় কার্যকর নেতৃত্ব, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা প্রয়োজনীয় গুণাবলি। এসব দক্ষতার মাধ্যমে উপাচার্য শিক্ষার গুণগত মান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম উন্নত করতে সক্ষম হবেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে উপাচার্য নির্বাচন প্রক্রিয়াস্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হওয়া জরুরি। শিক্ষার মান, গবেষণা, আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে দক্ষতা সমন্বয় সফলভাবে পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। যদি একজন উপাচার্যের মধ্যে সব গুণ না থাকে, তবে দক্ষ প্রশাসক, গবেষক এবং অর্থ ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করে দায়িত্ব ভাগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া একটি আদর্শ উপাচার্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সঠিক কাঠামো তৈরি করা জরুরি, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সহায়ক হবে।

যোগ্য উপাচার্য খোঁজার ক্ষেত্রে শুরুতেই প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিসহ সব অংশীজন নিয়ে একটি জাতীয় সার্চ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এই কমিটিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, ডোমেইন বিশেষজ্ঞ এবং সরকারের প্রতিনিধি থাকতে পারেন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আগ্রহ প্রকাশের (এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট) আহ্বান করা উচিত। এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি যোগ্য এবং দক্ষ একাডেমিশিয়ানদের মধ্য থেকে সেরা ব্যক্তিকে নির্বাচন করা সম্ভব হবে। এই কমিটির মাধ্যমে যারা ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রশাসক হিসেবে আসতে চান, তাদের একটি প্যানেল (প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার তিন গুণ হারে) তৈরি করা যেতে পারে। উক্ত প্যানেলকে আদর্শ শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক সেলফ টেস্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই প্যানেলের সদস্যদের প্রাক-সক্ষমতা যাচাই করে তাদের সবল ও দুর্বল দিকগুলো নিরূপণ করা উচিত। প্রয়োজনে প্রাক্তন উপাচার্যদের দিয়ে একটি অনলাইন নলেজ শেয়ারিং সেশন এবং প্রি-সার্ভিস নলেজ শেয়ারিং ওয়ার্কশপের আয়োজন করা যেতে পারে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরন অনুযায়ী ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করে একটি চেকলিস্ট তৈরি করতে হবে, যেখানে প্রার্থীর শিক্ষা, গবেষণা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হলে ভালো হবে।

বিগত সময়ে শুধু বিভিন্ন রাজনৈতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত নামগুলো যাচাই-বাছাই করে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে। তবে এই পদ্ধতিতে অনেক সময় দক্ষ একাডেমিশিয়ান এবং গবেষকরা, যারা রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট নন, তারা প্যানেলে আসতে পারেন না। এটি উচ্চশিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি শিক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং পেডাগোজির ওপর বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিকে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (পেডাগোজি) পদে নিয়োগ করা এখন সময়ের দাবি। এটি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সহায়ক হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর পেডাগোজির পদ নেই, সেখানে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর শিক্ষা হিসেবেও একজন পেডাগোজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা যেতে পারে।

মো. সাব্বির হোসেন: সহকারী অধ্যাপক (শিক্ষা প্রযুক্তি), 
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
sabbir.ict@bou.ac.bd 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×