ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইসলাম ও সমাজ

গিবতের পরিণাম

গিবতের পরিণাম

প্রতীকী ছবি

মো. শাহজাহান কবীর

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:০২

গিবত কবিরা গুনাহ। হাদিসে গিবতকে বড় সুদ বলা হয়েছে (সহিহ আত্‌ তারগিব)। সমাজে যেসব পাপের প্রচলন সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে গিবত শীর্ষস্থানীয়। এই পাপ এমন এক নীরব ঘাতক, যা বান্দার অজান্তেই তার নেকির ভান্ডার নিঃশেষ করে দেয় এবং তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করে ছাড়ে। এটি চুরি-ডাকাতি, সুদ-ঘুষ, জেনা-ব্যভিচার ও মৃত মানুষের পচা গোশত ভক্ষণের চেয়েও মারাত্মক ও নিকৃষ্ট। 

‘গিবত’-এর অর্থ পরনিন্দা, কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা, পরচর্চা, দোষারোপ, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের কাছে তুলে ধরা। ইসলামী শরিয়তে গিবত হারাম ও কবিরা গুনাহ। হাদিসের ভাষ্যমতে, ‘যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংসের দুঃসংবাদ।’ (সহিহ মুসলিম)। 
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা হুজুরাতের ১২ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কারও গিবত না করে। তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই করে থাকো।’ এ আয়াত প্রমাণ করে– গিবত করা মৃত ব্যক্তির গোশত ভক্ষণ করার শামিল।

অন্যত্র মহান আল্লাহ সুরা হুমাজাহের ১-৯ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।...অবশ্যই তারা হুতামাতে নিক্ষিপ্ত হবে। তুমি কি জানো হুতামা কী? তা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে। নিশ্চয় বেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।’
হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা কি জানো গিবত কাকে বলে?’ সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) ভালো জানেন।’ তিনি বলেন, ‘তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গিবত।’ 

সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি, সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলেও কি গিবত হবে?’ উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যে দোষের কথা বলো, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তবে তুমি অবশ্যই গিবত করলে। আর তুমি যা বলছ, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তবে তুমি তার ওপর তুহমত ও বুহতান তথা মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছ।’ (সহিহ মুসলিম)। 

গিবত বা পরনিন্দা ইসলামী শরিয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নিষিদ্ধ। গিবত করা ও গিবত শোনা সমান অপরাধ। মদ্যপান, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদি থেকেও মারাত্মক এবং নিকৃষ্টতম পাপ ও কবিরা গুনাহ 
হলো গিবত। 
অন্যান্য পাপ তাওবা দ্বারা মাফ হয়; কিন্তু গিবতকারীর পাপ শুধু তাওবা দ্বারা মাফ হয় না। যার গিবত করা হয়েছে সে ব্যক্তি যদি মাফ করে, তবেই আল্লাহর কাছে মাফ পাওয়া যেতে পারে। এই একটি কবিরা গুনাহ কাউকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
অন্য হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে, অর্থাৎ গিবত করবে, কিয়ামতের দিন গিবতকারীকে পচা মাংস ভক্ষণ করতে বাধ্য করা হবে। অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে। (বুখারি)।

যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে অন্যের গিবত করে, তখন তাকে থামতে বলুন। আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করুন। আর তাতেও যদি কাজ না হয়, তবে সেখান থেকে সরে আসুন। কেননা, রাসুলে কারিম (সা.) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
অন্য হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.)-কে সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! গিবত কি জেনার চেয়েও মারাত্মক?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। কারণ, কোনো ব্যক্তি জেনার পর তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গিবতকারীকে যার গিবত করা হয়েছে, তিনি ক্ষমা না করলে আল্লাহ তায়ালাও ক্ষমা করবেন না।’ (মুসলিম)। 
সংশোধনের জন্য বলতে চাইলে যার বিষয় শুধু তাকেই বলা যাবে, অন্যকে নয়। সমালোচনাকারীকে বিচারের দিনে নিজের নেক আমল দিয়ে এর বিনিময় পরিশোধ করতে হবে। যার সমালোচনা করেছে, তার গুনাহ নিয়ে সমালোচনাকারীকে জাহান্নামে যেতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে গিবত থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন।

ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা 
 

আরও পড়ুন

×