ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

অন্যদৃষ্টি

পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ হোক

পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ হোক

প্রতীকী ছবি

মোছা. রোকেয়া সুলতানা 

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:১০

আমরা নারী অধিকারের পক্ষে অনেক কথাই বলি। কিন্তু আমাদের সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত পারিবারিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশে পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা একটি দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার একজন নারীর ন্যায়বিচার ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা বর্তমান সমাজের জন্য লজ্জাজনক এবং নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় এক প্রকার বৈষম্য সৃষ্টি করে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময় পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়। এ প্রেক্ষাপটে আমরা চলতি বছরের ২০ অক্টোবর দেশের একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ১৩ বছর বয়সী কল্পনার কথা বলতে পারি। যে সাড়ে চার বছর ধরে একটি বাসায় কাজ করত, কিন্তু দিন শেষে নির্যাতনের শিকার হয়ে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। শারীরিক নির্যাতন করে তার চারটি দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তার হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছ্যাঁকার ক্ষত; বুক-পিঠসহ সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শারীরিক সমস্যার সঙ্গে মানসিক ট্রমা তো আছেই। আসলে নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। 

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের ছোট করে দেখা নির্যাতনের অন্যতম কারণ। আমাদের সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা নারীদের অধিকার ও মর্যাদাকে খর্ব করে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাব ও দারিদ্র্য নারীদের প্রতি সংঘটিত অন্যায়কে মেনে নিতে বাধ্য করে। আমাদের দেশে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ে রয়েছে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন থাকা সত্ত্বেও এর সঠিক বাস্তবায়নের অভাবে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ফলে সঠিক বিচার না হওয়ায় তারা পুনরায় নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, ধর্ষণের মতো কাজে লিপ্ত হতে ভয় পায় না। এ ছাড়া নারী নির্যাতনের পেছনে আরও একটি কারণ হলো, সামাজিক চাপ ও নারীদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়। 
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পারিবারিক সহিংসতার অন্যতম কারণ হলো যৌতুক। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০২১-এর তথ্য অনুযায়ী, মোট নির্যাতনের শিকার নারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ যৌতুকের কারণে বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। নির্যাতনের ঘটনা শুধু সেই নারীর জীবনে নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্মের জীবনেও ফেলছে ভয়াবহ প্রভাব।
নারীদের প্রতি সহিংসতার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এই নির্যাতন শারীরিক আঘাতকে ছাড়িয়ে মানসিকভাবেও একজন নারীকে অস্তিত্বহীন করে তোলে। এতে একজন নির্যাতিত নারীর স্বাভাবিক জীবনযাপন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।

এ ছাড়া অনেকে মানসিক বিভিন্ন চাপ সহ্য করতে না পারার কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পারিবারিক সহিংসতায় এসব নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পরিবারের পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে সচেতন হতে হবে। পরিবারে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
নারীকে অবহেলার চোখে না দেখে বা দুর্বল না ভেবে বরং পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। যেখানে আইনের সহায়তা প্রয়োজন, সেখানেই আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে। 
পারিবারিক নির্যাতনের শিকার নারীরা আমাদের সমাজের এক অসহায় ও নিপীড়িত অংশ। এই সমস্যার সমাধান কেবল আইন বা প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্ভব নয়। বরং আমাদের মনোভাব ও পারিবারিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। প্রত্যেক নারীকে তার অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে আমরা সত্যিকার অর্থে তখনই একটি সভ্য ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব।

মোছা. রোকেয়া সুলতানা 
সম্মান (প্রথম বর্ষ), ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ
 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×