অন্যদৃষ্টি
পিটিআইর প্রতিবাদ এবারও নিষ্ফল
প্রতীকী ছবি
এম এ নিয়াজি
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৪০
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সর্বশেষ বিক্ষোভের প্রথম দিনের পর দলটির প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান আদিয়ালা জেল থেকে বের হননি বা শাহবাজ শরিফও ক্ষমতাচ্যুত হননি। এই বিবেচনায় আন্দোলনটি ব্যর্থ হয়েছে। এটি ছিল বেশ দীর্ঘ। আদতে এখানে ব্যর্থতাকে বিকল্প ভাবা হয়নি। এটি একটি চূড়ান্ত আহ্বান বলে মনে করা হয়েছিল। বিক্ষোভটি হয়তো এখন কিংবা কখনও না, অথবা করো অথবা মরো পরিস্থিতির সঙ্গে সমতুল্য। এতে পিটিআইকে চূড়ান্ত প্রচেষ্টা চালাতে হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল ইমরান খানকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানো। যদিও পিটিআই বুধবার বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে বলেছে, এটি কোনো সামরিক বা সশস্ত্র দল নয়, খাইবার পাখতুনখাওয়ার (কেপি) মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গন্ডাপুর বলেছেন, বিক্ষোভ চলমান এবং একমাত্র ইমরানই এটি বন্ধ করতে পারেন।
তবে এখানে একটি ভয়াবহ ত্রুটি রয়েছে। পিটিআই একটি বিপ্লবী দল নয়। এটি আগে ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জন করেছিল। এটি এস্টাবলিশমেন্টের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছিল কিনা তা অপ্রাসঙ্গিক। আবার কেউ কেউ আছেন, যারা এই ধরনের সাহায্য চেয়েও পাননি। এ কারণে পুরো ব্যবস্থা উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। বাস্তবে এটি চিন্তাই করা হয় না। পিটিআইর সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিল এস্টাবলিশমেন্টকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য করা। এরই মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে সরানো; আন্দোলনের মাঠে ঝড় তোলা নয়। তারা এভাবেই ক্ষমতার যন্ত্রগুলো দখল করতে চায়।
তবে পিটিআই যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তার মধ্যে একটি হলো এটি স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দল, যদিও এটি বিপ্লবী দল হিসেবে অঙ্গভঙ্গি দেখাতে চায়। ৯ মে ২০২৩-এ একটি অভ্যুত্থানপ্রচেষ্টা তাই তার চোখের সামনে ব্যর্থ হয়েছিল। এর সমর্থকরা দলটিকে ভোট দিতে ইচ্ছুক, তবে দলের জন্য তারা জান দেবে না। আসলে দলটি তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়, তার জন্য এর সমর্থকরা মরতে নারাজ।
পিটিআই পিপিপি বা পিএমএল(এন)-এর মতোই পরিবারতান্ত্রিক দল হয়ে উঠছে। তবে পিপিপি ভুট্টোর ফাঁসির পর রূপান্তর ঘটিয়েছিল, আর পিএমএল(এন) যখন পরিবর্তন আনে তখনও মিঞা নওয়াজ শরিফ জীবিত আছেন। পিটিআইও এক ধরনের পরিবর্তন করেছে, ব্যারিস্টার গোহর আলী খান এর চেয়ারম্যান হলেও ইমরান খান এখনও শক্তভাবে দলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। এই বংশগত বৈরিতা, স্ত্রী ও বোনের মধ্যে রশি টানাটানির কারণে তা পারিবারিক বৈরিতাও বটে, অসুবিধা সৃষ্টি করছে।
ভাবাদর্শের অভাবের কারণেও পিটিআই অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। আত্মত্যাগ করার জন্য এখানে কোনো প্রকৃত কারণ রয়েছে বলে মনে হয় না। ইমরানের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মানুষ প্রচুর থাকলেও, মনে হচ্ছে ব্যারিকেড ভাঙার জন্য কেউ নেই।
১৯৬৯ সালের আন্দোলনের নেপথ্যে ছিল ইয়াহিয়ার সামরিক আইন, আর ১৯৭৭ সালের আন্দোলন জেনারেল জিয়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। সুতরাং, সামরিক শাসন পিটিআইর জন্য ততটাই উপকারী হবে যতটা জিয়ার শাসন পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স বা পিএনএর জন্য হয়েছিল। তখন কয়েকজন ব্যক্তি মন্ত্রী হওয়া ছাড়া কিছুই অর্জিত হয়নি। আর পিএনএর দলগুলোর অধিকাংশই পিপিপির পাশাপাশি এমআরডিতে জায়গা খুঁজে নেয়। পিপিপির সঙ্গে জোট করার ক্ষেত্রে পিটিআই হয়তো একই অবস্থানে থাকতে পারে। এর অর্থ হবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া, আর ইমরান এতটা পথ পাড়ি দিতে পাবেন কিনা বলা যায় না। ইমরানের ভুট্টোর ভাগ্যবরণের বেশ ঝুঁকিও রয়েছে, যদিও নওয়াজ শরিফের ইতিবাচক দৃষ্টান্তও আছে।
পিটিআইর প্রধান সমস্যা হলো আগামী নির্বাচন পর্যন্ত কীভাবে টিকে থাকা যায়। মনে হচ্ছে ‘এখন কিংবা কখনও নয়’ সমাবেশ ‘কখনও নয়’ বার্তা দিচ্ছে, বা অন্তত ‘এখন নয়’ উত্তর দেওয়া হয়েছে। পিটিআই সমর্থকদের প্রতিশ্রুতির গভীরতা এতটুকুই যে, তারা যুক্তিসংগত কাজ করতে পারে না এবং অন্য দলও খুঁজে পায় না অথবা রাজনীতি ছাড়তে পারে না। ইমরানের নিজের মনোভাবের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। তিনি যাই করুক না কেন, তাঁর উচিত কল্পকাহিনির সেই ছেলেটির কথা মনে রাখা, যে প্রায়ই ‘নেকড়ে’র কথা বলে কেঁদেছিল।
এম এ নিয়াজি: পাকিস্তান টুডের সাংবাদিক; পাকিস্তান টুডে থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
- বিষয় :
- অন্যদৃষ্টি