ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

দিবস

সেবা পেতে প্রতিবন্ধীর ভোগান্তি

সেবা পেতে প্রতিবন্ধীর ভোগান্তি

প্রতীকী ছবি

তালুকদার রিফাত পাশা

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৩

প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়। এবারের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসের প্রতিপাদ্য– ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বিকশিত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে প্রতিবন্ধী জনগণ’। এই প্রতিপাদ্যের আলোকে মনে হয়, আমরা সে পথ থেকে এখনও অনেক দূরে। কারণ আমাদের প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিশ্বে যেখানে প্রয়োজনীয় সেবা প্রতিবন্ধীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেখানে আমাদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সেবার পেছনে ছুটেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবাপ্রাপ্তিতে প্রথম বাধা শুরু হয় তাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অফিস স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয় থেকে। দেশের কোনো সমাজসেবা অফিসই সম্পূর্ণভাবে প্রবেশগম্য নয়। অনেক সমাজসেবা অফিস আছে, দোতলা, তিনতলা বা আরও ওপরে; সেখানে কোনো র‍্যাম্প নেই। এতে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সহজে প্রবেশ করতে পারেন না। 
এ ছাড়া শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো প্রশিক্ষিত ইশারা ভাষার অনুবাদক নেই। সেখানে গেলে মন ভালো হওয়ার পরিবর্তে খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে।
শিক্ষা গ্রহণেও আছে নানা ধরনের বাধা। অপ্রবেশগম্যতা একটি সাধারণ সমস্যা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিলেও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেক পিছিয়ে। অধিকাংশ স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভবন অপ্রবেশগম্য। উপরন্তু সহায়ক উপকরণের অভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা পছন্দমতো বিষয়ে অধ্যয়ন করতে পারে না। আর কর্মমুখী শিক্ষা! প্রতিবন্ধীরা সে পথ চাইলেও গ্রহণ করতে পারে না। কারণ আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে কোনো মানসম্মত প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি।
স্বাস্থ্যসেবাও প্রতিবন্ধীদের হাতের নাগালে নয়।

দেশের সরকারি-বেসরকারি কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সেবা-সহায়তা’ নামে আলাদা কোনো টেবিল নেই, যেখানে গেলে একজন প্রতিবন্ধী কাঙ্ক্ষিত সেবাটি পাবেন। অধিকাংশ সময়ে হাসপাতালে হাজার রোগীর ভিড় ঠেলে সেবা নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ডাক্তার, নার্স কিংবা হাসপাতাল কর্মচারী, কারও দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের নিয়ে যে বা যারা ভাবেন বা কাজ করেন তারা যদি এ ধরনের বিনা পয়সার চিন্তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ না করেন, তাহলে কখনোই স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক চাহিদা প্রতিবন্ধীদের জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
কিছু সেবা আছে, যা সাধারণ ব্যক্তি পেলেও প্রতিবন্ধীর ক্ষেত্রে হাজারো ঝামেলা পোহাতে হয়। এর অন্যতম ব্যাংক সেবা। ব্যাংক হিসাব খোলা যে কতটা কঠিন, তা কেবল প্রতিবন্ধীই ভালো জানেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা স্বাক্ষর দিতে পারেন না; শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দোতলায় উঠতে পারেন না; শ্রবণপ্রতিবন্ধী ইশারা ভাষা ছাড়া বোঝেন না। এর ফল হলো প্রতিবন্ধীর জন্য ব্যাংক হিসাব খোলা সম্ভব হয় না, যদি কোনো ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সদয় হয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে না দেয়।

শপিংমল এবং পার্কে গিয়ে বিনোদন পরিবারের সদস্যদের সহায়তা না পেলে প্রায় অসম্ভব।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন এবং বেসরকারি খাতের নানা সেবার মতো বিষয়গুলো শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না ভেবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি চাই তাহলে স্বল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের জন্য উন্নত সেবার ব্যবস্থা করতে পারি।
যেমন দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীর জন্য সেবা ও সহায়তা ডেস্কের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেখানের ফোন নম্বর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সামনে বড় করে লিখে রাখতে হবে। এর পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধীর অধিকার সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। তাদের জন্য উন্নত সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি যে জটিল কোনো বিষয় নয়, সেটিও মনে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে এটি ভাবলে হবে না, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এলে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বরং প্রতিবন্ধীর জন্য সেবা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। বিষয়টি এমন হবে– সেবাই প্রতিবন্ধীর কাছে পৌঁছে যাবে। 

তালুকদার রিফাত পাশা: পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ
rifatir2@gmail.com

আরও পড়ুন

×