ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

সমকালীন প্রসঙ্গ

বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা ও নাগরিক দায়িত্ববোধ

বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা ও নাগরিক দায়িত্ববোধ

প্রতীকী ছবি

জান্নাতুল ফেরদাউস পিয়াসা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:১৯

বা কস্বাধীনতা গণতান্ত্রিক সমাজের অন্যতম প্রধান অধিকার। স্বাধীনভাবে কথা বলা মানুষের মৌলিক অধিকারেরই অংশ। এটি মানুষকে নিজের চিন্তা, মতামত ও অনুভূতি প্রকাশের নিশ্চয়তা দেয়। গণতান্ত্রিক সমাজে এই বাকস্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দেখা যায়।

ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করে গণতন্ত্র। তবে এই স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বও চলে আসে। যেমন মতপ্রকাশ করতে গিয়ে আমরা যেন অন্যের ক্ষতি বা অবমাননা না করি। এটি শুধু কথা বলার আধিকার নয়; জনগণের মতামত ও ভাবনার সৃজনশীল প্রকাশ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের চাহিদা এবং দায়বদ্ধতার পরিচায়ক। বাকস্বাধীনতা মানুষকে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ দেয়, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। যদিও মানুষ মনে করে, স্বাধীনভাবে মতামত বা কথা বলা আবার কী? আমাদের সংবিধানে এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩৯-এ বলা হয়েছে– 

(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।

(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।

তার মানে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও দিয়েছে সংবিধান। এক গবেষণায় দেখা গেছে, গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে সরকার ও শাসনের ওপর নজরদারি করা সম্ভব হয় না। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। অপরদিকে নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা আমরা যদি চিন্তা করি, তাহলে দেখতে পাই, বাকস্বাধীনতা অন্যান্য মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিচারিক ও সামাজিক সচ্ছলতার জন্য অপরিহার্য। 

বাকস্বাধীনতা কোনো সমাজে না থাকলে এক সময়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে মানুষ। ৫ আগস্ট আমরা ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান দেখেছি, সেটিও এর বাইরে নয়। আমরা দেখেছি, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে দেড় হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন এবং প্রায় ২০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তবে মানুষের বিক্ষুব্ধ হওয়ার পেছনে যেমন ১৫ বছরের দমবন্ধ করা পরিবেশ ছিল, তেমনি দেশে-বিদেশে অনেকেরই অকুতোভয় উচ্চারণও ছাত্র-জনতাকে উৎসাহ দিয়েছিল।

একই সঙ্গে সাংবাদিকদের অবদানও কম নয়। যদিও সংবাদমাধ্যম সংবিধান অনুসারে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেনি, তার পরও তারা বাকস্বাধীনতার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিল।

সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের কাছে জনগণের মত পৌঁছে। জনগণের মতামত বা মতবিনিময় পৌঁছাতে সাংবাদিকরা সরকারের সঙ্গে জনগণের হয়ে সেতুর মতো কাজ করতে পারে। তারা যদি জনগণের সঠিক, গঠনমূলক সমালোচনা পৌঁছাতে পারে, তবে সরকারের নজরে আসবে এবং তারা ব্যবস্থা নিতে পারবে। এটাই বোধ করি গণতন্ত্রের শিক্ষা। 

আমাদের প্রত্যেকের উচিত বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। গঠনমূলক সমালোচনা সমাজকে সুন্দর ও সঠিক পথে ধাবিত করে। আমাদের প্রত্যেককে সাহস ও মনোবল রাখতে হবে। তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক নিরাপদ পৃথিবী নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

শুধু ভোট দেওয়াই গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্র অনেক স্বাধীনতার সমন্বয়। তার মধ্যে বাকস্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সমাবেশ করার স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, ধর্মঘটের স্বাধীনতা আছে। এসব মিলিয়েই গণতন্ত্র।

আসুন, আমরা দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করি এবং এক উন্নত পৃথিবী গড়ে তোলায় নিজ জায়গা থেকে সচেষ্ট হই। যদি আমরা সবাই একত্রিত হই এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করি অথবা মনে সাহস ও মনোবল রাখি, তাহলে এটি স্বপ্ন নয়, বাস্তব। 

জান্নাতুল ফেরদাউস পিয়াসা: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
 

আরও পড়ুন

×