ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

মিডওয়াইফের চাকরির বিজ্ঞপ্তি কম কেন

মিডওয়াইফের চাকরির বিজ্ঞপ্তি কম কেন

প্রতীকী ছবি

তানজিলা আকতার

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৭

দেশে মাতৃস্বাস্থ্যসেবা জোরদার ও মাতৃমৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মিডওয়াইফ পেশায় প্রশিক্ষিত বিপুলসংখ্যক মানুষ দরকার। এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মিডওয়াইফ মা ও শিশুর সেবায় সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন। মিডওয়াইফ নারীকে তাঁর গর্ভধারণ পূর্বপরিকল্পনা থেকে শুরু করে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন,  প্রসব-পরবর্তী ৪২ দিন পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা এবং নবজাতকের (জন্মের পর থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত সময়ের শিশুকে নবজাতক বলে) স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ, যত্ন ও সহায়তা দিয়ে থাকেন।

এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৭০টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫ হাজার ৭০৫ জন শিক্ষার্থী তিন বছর মেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এর মধ্যে ৬২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৮২৫ জন এবং বেসরকারি ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৮৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন জেলায় ৩১টি সরকারি নার্সিং কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা এবং ব্যাচেলর ইন মিডওয়াইফারি কোর্স চালু করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করে মিডওয়াইফ হওয়া সম্ভব। মিডওয়াইফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বেসরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি সংস্থায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেন। তথ্যমতে, বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসবের প্রায় ৭৪ শতাংশ হচ্ছে মিডওয়াইফের মাধ্যমে। মিডওয়াইফরা স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে মা ও নবজাতকের জীবন বাঁচাতে পারলেও স্বীকৃতির দিক থেকে পিছিয়ে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিডওয়াইফের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) ২০২০ সালের পর চলতি বছর মিডওয়াইফদের সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। মিডওয়াইফের যে চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা আছে, সরকারের উচিত প্রতিবছর তাদের নিয়োগ দেওয়া। চলতি বছরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মিডওয়াইফদের বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১০ জুন এবং ফল প্রকাশিত হয় ২ অক্টোবর। পরীক্ষা ও ফলের এই সময়ও কমিয়ে আনতে হবে।

২২ হাজার মিডওয়াইফের টিম গঠনের ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগের কথা আমরা শুনেছি। সেখান থেকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তিন হাজার মিডওয়াইফ, যা তাদের সংখ্যার তুলনায় অনেক কম। মিডওয়াইফদের নিয়োগ বৃদ্ধি করে তাদের কাজের পরিধি বাড়িয়ে দিতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিডওয়াইফদের নিয়োগ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জেলা সদর এবং বিভাগীয় হাসপাতালেও যেন আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। সরকারি সেক্টরের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী যেসব সংস্থা আছে, সেখানেও মিডওয়াইফদের কর্মসংস্থান করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের লেবার রুম, ম্যাটারনিটি ওয়ার্ডগুলোতে মিডওয়াইফদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে হবে। বেসরকারি খাতে প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ নিয়োগ দেওয়া হলে মায়েরা সেখান থেকেও সঠিক সেবা পাবেন। 
‘সুস্থ শিশু, সুস্থ মা মিডওয়াইফ ছাড়া হবে না’– এ স্লোগান স্মরণ করে মা ও নবজাতকের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করি এবং মিডওয়াইফদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জোর দাবি জানাই। এতে বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে তাদের উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ও বিবেচনা করা দরকার। তা ছাড়া দেশের বাইরেও এ পেশায় ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা প্রয়োজন। সর্বোপরি মিডওয়াইফদের পরিকল্পিত কর্মসংস্থান নিশ্চিত হলে এ পেশায় অনেকেই আগ্রহী হবেন এবং দেশ-বিদেশের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবেন।
  
তানজিলা আকতার: ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি, চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজ
 

আরও পড়ুন

×