ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

দিবস

সামাজিক সুরক্ষার তাৎপর্য

সামাজিক সুরক্ষার তাৎপর্য

প্রতীকী ছবি

মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৩:১৬ | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৪:২১

সমাজে বিবিধ শ্রেণির মানুষ বসবাস করে। অবস্থা ও অবস্থানভেদে মানুষের সক্ষমতা এক নয়। দেশের নাগরিকরা সর্বত্র নানা সমস্যায় ভুগছে। অনেক সম্প্রদায় সামাজিক বৈষম্যের শিকার। নাগরিকরা ন্যায্যতা, নাগরিক অধিকার ও সামাজিক সুবিচার থেকে বঞ্চিত। আবার প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুর্যোগের শিকার হয়ে অনেক মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। দুরারোগ্য ব্যাধি, দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, মহামারি তো আছেই। তাই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সেবামূলক উদ্যোগ ও কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। 

আজ ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য– ‘নেই পাশে কেউ যার, সমাজসেবা আছে তার’। সমাজের বঞ্চিত মানুষের অবস্থা, দুর্দশা ও হতাশার চিত্র সব পক্ষের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ দিবসের আয়োজন। সমাজকল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ, কল্যাণমূলক ধারণা প্রচার এবং সামাজিক সচেতনতা জাগ্রতকরণ এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য। সরকার ২০১২ সালের ৪ জুন দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর দেশব্যাপী ২ জানুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জাতীয় কর্মসূচির আলোকে দিবসের তাৎপর্য বিবেচনায় এ বছর দিবসটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সামাজিক সংগঠনগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণে পালন করা হচ্ছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকে কল্যাণমূলক সমাজ ব্যবস্থা ও সেবামূলক উদ্যোগ প্রচলিত। ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষ অভাবগ্রস্ত, দুঃখী, অসহায় ও সমস্যাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দরগাহ স্থাপন করে এবং সংলগ্ন এলাকায় কূপ স্থাপন, পুকুর খনন, ধর্মীয় পাঠশালা, লঙ্গরখানা স্থাপন ও অভাবগ্রস্তদের সহায়তায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। প্রাচীন ভারতবর্ষে সমাজকর্ম চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায় ‘জটাকাস’ সাহিত্য চিত্রে; বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক বুদ্ধের অনুশাসনমালায়। প্রাচীন পণ্ডিত কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে উল্লেখ করেন, ‘প্রজাদের সুখই রাজার সুখ এবং রাজা এতিম, বৃদ্ধ, অক্ষম, ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায়দের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করবেন।’ সম্রাট অশোক কলিঙ্গলিপিতে বলেছেন, ‘প্রজা মাত্রই আমার সন্তান; তাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গল সাধন আমার একমাত্র লক্ষ্য।’ 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অন্যতম লক্ষ্য দেশে নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার ও দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা। সময়ের আবর্তে নতুন কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ এ মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে। বৃদ্ধি করতে হবে সেবাকর্মের পরিসর; সৃজন করতে হবে নতুন কর্মপদ; পেশার মানোন্নয়ন করতে হবে এবং দপ্তরকে তরুণ কর্মপ্রত্যাশীদের আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। 

‘সমাজসেবা’ একটি পৃথক কল্যাণমূলক উদ্যোগ, যাতে পৃথক সমস্যা নিরসনের প্রচেষ্টা থাকে। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে পরিচালিত সমাজসেবা কর্মসূচি কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। যার মধ্যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, হিজড়া ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ভাতা, শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম, প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমসহ অন্যান্য কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সমাজসেবা অধিদপ্তর দেশব্যাপী বিবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে ১.২৫ কোটির বেশি ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগী হিসেবে যুক্ত করেছে।

বিশ্বায়নের যুগে দেশের মানুষ প্রতিনিয়ত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংকটে পতিত হচ্ছে। সংকট মোকাবিলা করতে সরকারকে চাহিদানুযায়ী কল্যাণ প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। এ প্রচেষ্টার সফলতা নির্ভর করে সম্মিলিত কর্মপ্রয়াসে। সমাজের বঞ্চিত মানুষ সামাজিক সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তা প্রার্থনায় সর্বদা সক্ষম মানুষদের দিকে নীরবে তাকিয়ে থাকে। নিগৃহীত ও বঞ্চিতদের পাশে থাকার মাঝে ব্যক্তিসত্তার উৎকর্ষ নিহিত। সমাজকর্ম শুধু রাষ্ট্রীয় একক দায়িত্বের অংশ নয়, বরং সমাজের সব সক্ষম নাগরিকের সমন্বিত কর্তব্য। সমাজসেবায় সবার অংশগ্রহণ চাই। সমাজসেবা সমাজকর্মীদের ধ্যান ও সাধনা। অসহায় ও বিপন্ন মানুষের সেবা হোক আমাদের পেশাগত অঙ্গীকার।

মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ: অধ্যক্ষ, জাতীয় সমাজসেবা একাডেমি, আগারগাঁও, ঢাকা

আরও পড়ুন

×